প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ করে পরিবার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে হত্যা করতে চায়। বিদেশ থেকে কিছু ইউটিউবার বিশেষ করে ফ্রান্স থেকে কয়েক দিন আগে দুজন ইউটিউবার অর্ডার দিয়েছে আমাকে হত্যা করার জন্য। কাল রাতে বা পরশু রাতে দেখলাম এরা সবাই জামায়াতের লোক।’ গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ল রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তাঁর বাসার সামনে ‘ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে একদল যুবক বিক্ষোভ করে। পরে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর পর থেকে তাঁর বাসার সামনে সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে নিয়মিত অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সমাজমাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। জুলাই গণ অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগ এনে রবিবার বিএনপি থেকে ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তাঁর বাসার সামনে এ দাবিতে রবিবার মধ্যরাত থেকে ‘বিপ্লবী ছাত্র জনতা’র ব্যনারে কয়েকজন অবস্থান নেয়।
এ পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ফজলুর রহমান। সেখানে বলেন, ‘আমার বাসার সামনে মব সৃষ্টি করা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আছে। শোকজের উত্তর আমি আমার দলকে দেব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার কাছে অনুরোধ-আমার ও আমার পরিবারের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করুন। জীবনের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সাংবিধানিকভাবেই আমার আছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘দুজন ইউটিউবার আমাকে হত্যা করতে বলেছে। আর জামায়াতের লোকেরা বলেছে ফজলুর রহমানকে গলা কেটে হত্যা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াত যেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে, সেদিন আমিও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছি। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আমি কোনো আপস করব না।’
‘একটি কালো শক্তি গত বছর ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে’, এমন কথা তিনি বলেননি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি এ কথা বলিনি। আমার সমস্ত বক্তব্য আপনারা শুনুন। আমি কোথায় এ কথা বলেছি বলুন। এমন কোনো বক্তব্য আমি দিইনি।’ পুরো ভিডিও দেখে প্রমাণ করতে পারলে এজন্য ক্ষমা চাইবেন বলেও জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিল বিএনপি : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে শোকজের জবাব দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিএনপির দপ্তর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে ফজলুর রহমানকে শোকজ করেছিল বিএনপি। এবার কারণ দর্শানোর নোটিসে তাঁকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় বাড়িয়েছে দলটি।
দলীয় এক সূত্র জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে কিংবা জবাব সন্তোষজনক না হলে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। এরই মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি।