একসময় শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দেশের শীর্ষস্থানে ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। গবেষণায় সর্বোচ্চ বাজেট থাকা সত্ত্বেও গত এক দশকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দিন দিন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
কোয়াকোয়ারেলি সাইমন্ডসের (কিউএস) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে শাবিপ্রবির অবস্থান ছিল দেশের মধ্যে অষ্টম (বিশ্বে ৪০১-৪৫০ তম)। কিন্তু ২০২৪ সালে তা পিছিয়ে ১৩তম স্থানে নেমে আসে। নেদারল্যান্ডভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার এর স্কোপাস ডাটার ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত তালিকায় শাবিপ্রবি দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২তম স্থানে অবস্থান করছে।
সম্প্রতি স্পেনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো প্রকাশিত র্যাঙ্কিং-২০২৫ অনুযায়ী, গবেষণা, সামাজিক প্রভাব ও উদ্ভাবনে শাবিপ্রবি ১৮ ধাপ পিছিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮তম স্থানে নেমে গেছে। এমনকি গবেষণার সেরা দশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও জায়গা হয়নি।
সিনিয়র অধ্যাপকরা মনে করেন, কাঠামোগত দুর্বলতা, প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারাই এর মূল কারণ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ও গুণমান, আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রির হার, গবেষণা বাজেট, আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বিশ্বব্যাপী একাডেমিক ও পেশাগত গ্রহণযোগ্যতা- এসব ক্ষেত্রেই শাবিপ্রবি কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। শিক্ষকরা গবেষণার চেয়ে পাঠদানে বেশি সময় ব্যয় করেন এবং গবেষণায় প্রাতিষ্ঠানিক উৎসাহও সীমিত।
আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো আন্তর্জাতিকীকরণের অভাব। বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বিদেশি শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করতে বা যৌথ গবেষণা প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে সক্ষম হয়নি। ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল অবকাঠামোর দুর্বলতাও র্যাঙ্কিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ না হওয়ায় ওয়েবমেট্রিক্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবু হায়াত মিঠু বলেন, “র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার মান ৩০ শতাংশ, গবেষণা ৩০ শতাংশ, সাইটেশন ৩০ শতাংশ এবং বাকিটা আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর নির্ভর করে। এখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নেই। সেই সুযোগ-সুবিধাও গড়ে ওঠেনি।”
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্টক টেকিং কমিটি এবং রিসার্চ এনহান্সমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলো সময়সাপেক্ষ কাজ, তবে আমরা আশাবাদী শিগগিরই শাবিপ্রবি আবারও ভালো অবস্থানে আসবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল