প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগ একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রে তার দায়িত্ব পালন করছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বিচার বিভাগীয় জাতীয় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুডিশিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি গভীর তাগিদ নিয়ে আবারও পুনরাবৃত্তি করছি যে, বিচার বিভাগের জন্য একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। এটি শুধু প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের জন্যই প্রয়োজন নয়, বরং কাঠামোগত ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। যার ওপর সব ধরনের সংস্কার নির্ভর করে। ন্যায়বিচার কখনো ধার করা অবকাঠামো বা প্রেরিত কর্তৃত্বের ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে পারে না; এর নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি থাকতে হবে। তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর আমি যে ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার রোডম্যাপ’ উপস্থাপন করি, সেটি কেবল ঘোষণাপত্র ছিল নয়, বরং সেটি ছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জবাবদিহি ও জনগণের সেবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের এক স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। যে রোডম্যাপের কেন্দ্রে রয়েছে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’ গঠনের প্রস্তাব, যাতে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি ছিল বদলি ও পদায়ন নিয়ে রাজনীতি-বিমুক্ত নির্দেশনা এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত পৃথকীকরণের প্রস্তাব, যা বিচারিক স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আরও বলেন, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ৩৬টি জেলায় গত ১০ মাসে নতুন মামলার চেয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল বেশি। সেখানে বিচারকরা দেখিয়েছেন যে, সংস্কার ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বর্তমানের বাস্তবতা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিচার বিভাগে আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি দূর করতে এবং এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এ সরকারের সময় রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে বিচার করা হচ্ছে না। বিগত ১০ মাসে একটি গুমের ঘটনাও ঘটেনি। ক্রসফায়ার হয়নি। মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিন্তু এগুলো বিগত সরকারের সময়ে অহরহ হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি সারা দেশে ঘুরে ঘুরে সব কিছুই দেখেছেন। আপনি একটা সভ্য সমাজ গড়তে চাচ্ছেন। আপনার এসব চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তিনি আরও বলেন, জুলাই আগস্টের শহীদ মুগ্ধসহ হাজারো শহীদের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এগুলো ভেবে দেখবেন।