রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করবে। আর ওই সনদ বাস্তবায়নের পথ বের করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম দ্বিমত নেই বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখন ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে, এই ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে।
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, সেসব বিষয়ে অনেক দলই আরও আলোচনার কথা বলেছেন এবং আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছেন। তাই সংস্কারের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিগগিরই দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী মাসের (জুন) শুরুতে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু করা হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যান্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করি। তবে এই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের। রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারণ করবে প্রক্রিয়াটা কী হবে।’
আলী রীয়াজ জানান, ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত সংস্কারসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে একটি জরিপ পরিচালনার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে সুপারিশগুলো সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে অতিগুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ সম্পর্কে জনগণের মতামত নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হবে। আগামী মাসেই এই জরিপ পরিচালনা করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক ও মো. আইয়ুব মিয়া।
যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি : রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত ও প্রথম দফা আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখন ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, এর মধ্যে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে এ ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে এসব বিষয়ে অনেক দলই আরও আলোচনার কথা বলেছে এবং আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে।
কমিশন সহসভাপতি বলেন, ‘দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদব্যবস্থা বাতিল করা, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে বেশির ভাগ দল একমত হয়নি। এ ছাড়া প্রতিটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আরও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। কিছু বিষয় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা পরবর্তী ধাপের আলোচনার শেষে এসব সুপারিশের ব্যাপারে দলগুলোর চূড়ান্ত অবস্থান জানাতে পারব বলে আশা করি।’