জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা জানানোর পাশাপাশি যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, তাও স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করা হবে। কারণ আমাদের লক্ষ্য জাতীয় সনদ প্রতিষ্ঠা করা।
গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সেখানে ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা একটা মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। অমিত সম্ভাবনা তৈরি করেছি। কিন্তু যে কোনো সম্ভাবনা যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, এ পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো তেমন অত্যন্ত কঠিন। আমরা আশা করি, সবাই তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে এ কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো যতটা অর্জন করা সম্ভব, সেজন্য সক্রিয় থাকবেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগে সমর্থন জানালেও সংবিধানে হাত দেওয়া উচিত হবে না বলে জানান। তার মতে, সংবিধান শুধু পরিবর্তন করতে পারে জনপ্রতিনিধি বা যারা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসবে। ভিন্নমত পোষণ করে বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, সংবিধান এমন ঐশ্বরিক কোনো বিষয় না যেটা সংশোধন করা যাবে না। তিনি নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন। নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। তিনি বলেন, কমিশন হয়েছে, যারা অন্তর্বর্তী সরকার তারাই কমিশন গঠন করেছেন। এরকম একটি কমিশনকে সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। তখন কিন্তু আশাবাদী থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। গীতি আরা নাসরিন বলেন, ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু একটি কমিশন তৈরি হয়েছে। তারা পরিশ্রম করে সবার মতামত নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বলা হয়, সেই কমিশন বাতিল করতে হবে। তখনই প্রশ্ন জাগে যে, আমরা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করারও একটি পরিসর তৈরি করতে পারছি না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আবার নির্বাচনপদ্ধতিতে নারীদের অংশগ্রহণে আগ্রহী করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, ওয়ারেসুল করিম, আশরাফুন নাহার মিষ্টি, চৌধুরী সামিউল হক, মির্জা হাসান, ইলিরা দেওয়ান, সাইদা সুলতানা রাজিয়া, বাসুদেব ধর।