দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাত ব্যক্তির করা আপিল মঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। ড. ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। মামলার কার্যধারা বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ অন্যদের করা আপিলের ওপর গত ১৯ মার্চ শুনানি শেষ হয়। সেদিন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ২৩ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেন। গতকাল রায়ে আদালত বলেন, ‘আপিল ইজ অ্যালাউড।’ আদালতে আপিলকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে ছিলেন।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান সাংবাদিকদের জানান, হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ অন্যদের করা আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে ড. ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বাতিল হলো। তিনি আরও জানান, এখানে টাকা আত্মসাৎ হয়নি। টাকা পুরোটাই দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে কে কম পেয়েছে বা বেশি পেয়েছে। তার সামান্য অংশ নিয়ে ডিসপিউট। সেটা সিভিল কোর্টে হয়। ফৌজদারি কোর্টে নয়। তাই এ মামলা চলতে পারে না। মামলা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। আদেশের পর ড. ইউনূসসহ সাতজনের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, দুদকের মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ছিল। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে এবং হাই কোর্টের আদেশ ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত বছরের ৮ জুলাই মামলাটির কার্যধারা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তৎকালীন শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা। শুনানি নিয়ে গত ২৪ জুলাই হাই কোর্ট আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। অন্য ছয় আবেদনকারী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম (বর্তমানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিকে এরই মধ্যে রাষ্ট্র বা দুদকের পক্ষে পিপি মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গত বছরের ১১ আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। আপিলকারীদের আইনজীবীর ভাষ্য, মামলাটি শুনানির জন্য বিচারিক আদালতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য থাকা অবস্থায় এর আগেই তাদের (আপিলকারীদের) না জানিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়, যাতে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। পরে লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। পাশাপাশি আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আপিলের ওপর শুনানি হয়।
এর আগে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে মামলাটি করেছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
