আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্সে সরকার। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ডাকাতি, চাঁদাবাজি, গুলিসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। তাই জনমনে আস্থা ফেরাতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে মাঠে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় পরিচয় দেখে অপরাধী ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া কঠিন।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে র্যাব। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখছে র্যাব। এ ক্ষেত্রে কারও অন্য কোনো পরিচয় বিবেচ্য নয়। র্যাবের সব কটি ব্যাটালিয়নকে এ-সংক্রান্তে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমে সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে কেএফসি, বাটাসহ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে সেনাসহ সবগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। ইতোমধ্যে ওই সব ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের প্রতি হুমকি উল্লেখ করে কঠোর অভিযানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অপরাধীদের ধরতে গত রাতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া আমাদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জড়িত আরও ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তদন্তে সহায়তা করতে পারে এমন তথ্য থাকা যে কাউকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
সোমবার দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে এসব ঘটনার পর রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এরই মধ্যে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, পরিচয় যা-ই হোক, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এরই মধ্যে পুলিশি অ্যাকশন শুরু হয়েছে। পুলিশও যদি অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে ডিএমপি। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ দূর করতে গত ১৭ মার্চ পুলিশের ১২৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মাঠপর্যায়ের ছয়জন শীর্ষ কর্মকর্তা ফোকাল পয়েন্টে গিয়ে নিজস্ব সমস্যা, চ্যালেঞ্জ, ট্র্যাকিং বেইস পুলিশিং, শিল্প পুলিশসহ নানা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছিলেন। এরপর থেকে পুলিশি কর্মকাণ্ডে আগের তুলনায় ভিন্ন গতির বিষয়টি লক্ষ করেছে সাধারণ মানুষ। যদিও সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরায় বোমা ফাটিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ২০ মার্চ কুষ্টিয়ার খোকসা খেয়াঘাটের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে গুলি ও বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীরা। গত সোমবার ভোরে রাজধানীর মুগদা গ্রীন মডেল টাউনের একটি ভবনের চারটি ফ্ল্যাটে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এটা সত্যিই ইতিবাচক দিক। তবে তাদের বিতর্কিত করার জন্য নানা চেষ্টা হতে পারে। এজন্য তাদের জন্য যথাযথ মোটিভেশন এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা দরকার।
পুলিশ ও র্যাব সদর দপ্তর সূত্র বলছে, অপরাধ দমনে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চলছে। অপরাধ মোকাবিলায় গ্রহণ করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন পুলিশের পাঁচ শতাধিক টহল দল বের হচ্ছে। বিশেষ করে নগদ অর্থ উত্তোলন ও পরিবহনে রাজধানীতে ‘মানি এসকর্ট’ সেবা দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় সারা দেশে র্যাবের দুই শর মতো টহল দল কাজ করছে। পোশাকের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সাদাপোশাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, চিহ্নিত অপরাধপ্রবণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।