মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)। মিয়ানমারে সৃষ্ট ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত দেশটিতে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে প্রতি ঘণ্টায়। এ ছাড়া আহত হয়েছে ২ হাজার ৩৭৬ জনের বেশি। এদিকে ভূমিকম্পের পর থেকে ছোটখাটো কম্পন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় রাত কাটিয়েছে, বিশেষ করে মান্দেলেতে। এটি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যেখানে শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় মিয়ানমারের সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে। এটি এক বিরল পদক্ষেপ, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। খবর বিবিসি। এই ভূমিকম্পে পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডেও সাতজনের মৃত্যু হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ওই ভূমিকম্পের কারণে একটি বহুতল ভবন ধসে সাতজন নিহত হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কয়েক শ উদ্ধারকর্মী। জানা গেছে অন্তত ১৫ জন এখনো জীবিত অবস্থায় রয়েছেন। তবে তারা ধ্বংসস্তূপের প্রায় ৫ থেকে ১০ মিটার গভীরে আটকে আছেন। থাইল্যান্ডের অডিটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, নির্মাণাধীন ভবনটিতে সকালে ৪০০ জনের বেশি শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও, এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংককে ১০০ জন নির্মাণশ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি প্যানকেকের মতো স্তরে স্তরে ভেঙে পড়েছে, এবং এখনো ধস অব্যাহত রয়েছে, যা উদ্ধারকাজকে আরও জটিল করে তুলছে। তিনি আরও জানান, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে ধ্বংসস্তূপ আরও চাপা পড়তে পারে, তাই আপাতত তা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জীবিতদের বের করে আনার জন্য ধৈর্য ও সাবধানতার সঙ্গে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। এ ছাড়া ব্যাংককের অন্তত দুটি ভবন খালি করা হয়েছে এবং ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য গতকাল থেকে দুই হাজার ভবন পরিদর্শন করার কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের সাগাইং শহরের ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার গভীরে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। কিছুক্ষণ পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইউএসজিএস আশঙ্কা করে বলেছে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে। ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ইঙ্গিত দিয়ে ইউএসজিএস লাল সতর্কতা জারি করেছে। সূত্র : সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক সংস্থার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা পেজার ধারণা করছে, এই ভূমিকম্পে ১০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। তবে এটি শুধু একটি প্রাথমিক অনুমান, যা কম্পনের তীব্রতা ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে। ভূমিধস, মাটির তরলীকরণ বা সুনামির মতো পরবর্তী প্রভাব এতে বিবেচনা করা হয়নি।
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের হাতে আটক দেশটির সাবেক নেত্রী অং সান সু চি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হননি বলে জানা গেছে। কারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসকে জানিয়েছে যে তিনি এখনো রাজধানী নেপিডোর কারাগারেই রয়েছেন। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। ২০২৩ সালে তাঁকে কারাগার থেকে গৃহবন্দি করা হলেও পরে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওযয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় মিয়ানমারের সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে। এটি এক বিরল পদক্ষেপ, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।