রমজান মাসে রোজা পালন করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। তবে যারা অসুস্থ বা শরিয়তসম্মত ভ্রমণে থাকবেন অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অপারগ হবেন তাদের জন্য ইসলামি শরিয়ত বিভিন্নভাবে ছাড় প্রদান করেছে। দয়াময় আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা ভ্রমণে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সেই রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয় তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবেন। আল্লাহ রোজাদারদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কষ্টকর কিছু কামনা করেন না।’ (সুরা আল বাকারাহ, ১৮৩-১৮৫)
নারীদের জন্য তাদের মাসিক পিরিয়ড ও প্রসবকালীন রোজা রাখা নিষেধ। ওই সময়ে ছেড়ে দেওয়া রোজা রমজানের পরবর্তী কোনো সময়ে আদায় করে নেবেন। যারা শরিয়তসম্মত ভ্রমণে অথবা অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখতে পারেননি, অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করার পর ছেড়ে দেওয়া রোজাগুলো পরবর্তীকালে আদায় করা তাদের জন্য আবশ্যক। তবে যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা না থাকে, অথবা এমন বৃদ্ধ অবস্থায় পৌঁছে যান যার জন্য রোজা রাখার সক্ষমতা কখনো আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই, তাহলে তিনি প্রতিটি রোজার জন্য ফিদিয়া আদায় করবেন। ফিদিয়ার পরিমাণ হলো প্রতিটি রোজার জন্য একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে তৃপ্তিসহকারে দুই বেলা আহার করানো। টাকা দিয়েও ফিদিয়া আদায় করা যায়। তখন প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো- সদকায়ে ফিতরের সমপরিমাণ। গরিব, মিসকিন যারা জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত তারাই ফিদিয়া পাওয়ার উপযুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, কেউ অসুস্থ হলে বা রোজা পালন করতে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি রোজা রাখাতে হয়। আসলে বদলি রোজা বলতে ইসলামে কোনো পরিভাষা নেই। বরং অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সুস্থ হওয়ার পর নিজেই তা কাজা করতে হবে। আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে প্রতিটি রোজার জন্য একেকটি করে ফিদিয়া আদায় করতে হবে। শাসকষ্ট দূর করার জন্য মুখের অভ্যন্তরে ইনহেলার স্প্রে নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। ইনহেলার ব্যবহার করা ব্যতীত যারা রোজা পালনে অক্ষম তাদের জন্য রোজা বাধ্যতামূলক নয়। তারা পরবর্তীতে রোজা কাজা করবেন। কাজা করতে সক্ষম না হলে ফিদিয়া আদায় করবেন।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।