স্থানীয় আধিপত্য এবং ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর থেকেই চলছিল অস্থিরতা। এরই মধ্যে তিন মাস আগে স্থানীয় সেন্টু মিয়াকে গুলশানে মারধরের পর পিস্তল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল নিহত সুমন ওরফে টেলি সুমনের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ বলছেন, সেন্টুর বোনের স্বামী রুবেলের নিশানায় পরিণত হয়েছিলেন টেলি সুমন। এমন অভিযোগ নিহতের পরিবারসহ স্থানীয়দের। তবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুমন স্থানীয় জেল-ফেরত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে কাজ করছিলেন। এজন্য অনেকেরই চক্ষুশূল ছিলেন তিনি। মহাখালী এলাকার বিভিন্ন সরকারি অফিসে টেন্ডার, ডিশ, ইন্টারনেট ব্যবসায় শুরু হয়েছিল অস্থিরতা। অন্যদিকে সুমন হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে গতকাল গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ প্লাজার পাশে ফজলে রাব্বী পার্কের কোনায় টেলি সুমনকে দুই দফায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর চোখের পলকেই তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এন এস নজরুল ইসলাম বলেন, নিহত সুমনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ছিল। তিনি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য ছিলেন। আন্তগ্রুপ কোন্দল থেকে হত্যা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ চলছে। নিহত সুমনের স্ত্রী মৌসুমী বলেন, মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে সুমনের একটি ইন্টারনেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সুমনের সঙ্গে অন্য গ্রুপের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের হুমকির মুখে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। মহাখালী এলাকার ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের সদস্যরা সুমন হত্যায় জড়িত বলে তার অভিযোগ। একাধিক সূত্র বলছে, এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমায় থাকা এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় রাজনৈতিক মহলসহ অপরাপর অপরাধী চক্রের টার্গেটে ছিলেন সুমন। ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশে সুমন সম্প্রতি স্থানীয় রুবেল নামের এক ব্যবসায়ীর ইন্টারনেট এবং টেন্ডার ব্যবসায় বাধা দিচ্ছিলেন। মহাখালী গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে একটি টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাদের কারণে। সর্বশেষ রুবেলের শ্যালক সেন্টু মিয়াকে গত ২১ ডিসেম্বর গুলশানে মারধরের পর নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুমনের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই সুমনকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন রুবেল। সহায়তা নেন স্থানীয় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিদেশে পালিয়ে থাকা কয়েকজন প্রভাবশালীর।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেল ও তার সহযোগীরা এর আগে একাধিকবার সুমনের ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং তাকে মারধর করেছিলেন। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গুলশানে সুমনকে গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, সুমন মিয়া হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। রুবেল গ্রুপের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব ছাড়াও অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। থানার পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র্যাব এ হত্যার তদন্ত করছে।
কে এই সুমন হত্যার অভিযুক্ত রুবেল : পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মুকুলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন রুবেল। একসময় মুকুলের হয়ে কাজ করা তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাড্ডার রবিন ও মাহবুব। বহুল আলোচিত ২০০৮ সালে যুবলীগ নেতা লিটন পাশা হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন রুবেল। এর আগে কুড়িলে ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭-সহ গ্রেপ্তার হন। তবে জামিনে আসার পর অনেকটাই আড়ালে চলে যান। মহাখালী টিবি গেট এলাকার সরকারি অফিসের টেন্ডার এবং ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। সরাসরি অপরাধ কর্মে না জড়ালেও শীর্ষ সন্ত্রাসী মুকুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ায় আধিপত্য ছিল ওই এলাকায়।