পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের পাঁচটি বেজোড় রাত অনেক মর্যাদাপূর্ণ। এগুলো হলো- ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজান। এই তারিখ বিশিষ্ট রাতগুলো শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবেকদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, মুসলিম)। অতএব রমজানের শেষ দশক আরম্ভটা হয়তো শবেকদরের মাধ্যমে হচ্ছে। তাই এই শেষ দশকের গুরুত্ব অতুলনীয়। চান্দ্র মাসে রাতের সূচনা আগে হয়। তাই ২০ রমজান দিবাগত রাত এবং ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ রমজান দিবাগত রাতগুলো শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই রাতগুলো সাধ্যানুযায়ী ইবাদত, নফল নামাজ, দোয়া, জিকির, তাওবা-ইসতেগফার ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পালন করা সমীচীন।
আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত বা ২৭-এর রাত হচ্ছে শবেকদর। এই মতটিকে বিভিন্ন কারণে অনেকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে কোরআন হাদিসে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। বরং সহিহ হাদিসে একটি রহস্যময় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) শবেকদরের নির্দিষ্ট তারিখ আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে অবহিত হয়েছিলেন। সাহাবিগণকে তা জানানোর জন্য তিনি মসজিদে নববিতে গিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে শবেকদর সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু তাদের ঝগড়ার কারণে আমার নিকট থেকে এই রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো শবেকদর অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রদান করেন। (মুসলিম)। বস্তুত শবেকদর নির্দিষ্ট কোনো রাতে হওয়া কোরআন হাদিসের আলোকে কোনো নিশ্চিত বিষয় নয়। তবে তা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো এক রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই রসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবেকদর অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অনেক বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের গবেষণা মতে, শবেকদর প্রতিবছর নির্দিষ্ট একই রাতে হয় না। হতে পারে এক বছর ২১ রমজান, আরেক বছর ২৩ রমজান এবং অন্য বছরে ২৫, ২৭ বা ২৯ রমজানের রাত শরেকদর হয়। অতএব আমাদেরকে রমজানের শেষ দশক, বিশেষ করে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো অতি গুরুত্বসহকারে পালন করা প্রয়োজন। এই হিসেবে শবেকদর নির্দিষ্ট না থাকার মধ্যেও অনেক কল্যাণ রয়েছে। তা নির্দিষ্ট কোনো রাত হলে হয়তো মুসলিমরা সে রাতেই ইবাদত বন্দেগি পালন করতেন। আর তা নির্দিষ্টভাবে না জানার ফলে আল্লাহর অনেক প্রিয় বান্দা একাধিক রাতে ইবাদত বন্দেগি করার সুযোগ পেয়ে ধন্য হবেন। লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।