বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে পলাতক স্বৈরাচারের লোকেরা উল্লাস করার সুযোগ পায়। জনগণের ব্যবহারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কেবল সংস্কার প্রক্রিয়া এবং টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আজ এমনভাবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা আবারও পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি তরুণ ভোটার এখন পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তাঁদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিশিষ্ট পেশাজীবী নেতাদের সম্মানে কেন্দ্রীয় বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর এস এম এ ফায়েজ, ড. মাহবুবউল্লাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ড. সুকোমল বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। তারেক রহমান বিএনপির আমন্ত্রণে ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘এই মাহফিল শুধু একটা সম্মেলনই নয়। এটি নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি এবং ঐক্যের বার্তার বহন করে। এ ধরনের সম্মিলনের মাধ্যমে ইসলামের সামাজিক সৌন্দর্যের দিকগুলো, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ও মানবিক দিকগুলোও মানবসমাজে পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি-ধর্মীয় নির্দেশনা ও মূল্যবোধ মানুষকে কল্যাণের দিকেই ধাবিত করে। ইসলামে বান্দার হক কিংবা মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেজন্যই একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামের নির্দেশনা বান্দার হক এবং মানুষের অধিকার মেনে চলায় আমরা বিশ্বাস করি। আমরা যদি এই নির্দেশনা মেনে চলতে পারি, তাহলে ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীরা কোনো রকমের বিভ্রান্তি ছড়াতে সক্ষম হবে না।’ তারেক রহমান বলেন, ‘বিশ্বের গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভার বর্তায়। রাজনীতিবিদদের সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীদের অপরিসীম ভূমিকার অবদান অনস্বীকার্য। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির ভালো-মন্দের অনেক কিছুই নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম এবং রাষ্ট্র পরিচালনা নীতির ওপর। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশিষ্ট নাগরিক এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা যত বেশি কার্যকর থাকে রাজনীতিবিদদের দেশ পরিচালনার ভূমিকাও তত বেশি শক্তিশালী হয়। রাজনীতি আদৌ একটি পেশা কি না, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে রাজনীতিকে যদি আমরা একটি সুসংগঠিত কিংবা সুসংবদ্ধ ঘরের ছাদের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে খুব সম্ভবত সিভিল সোসাইট এবং পেশাজীবীগণ হচ্ছেন সেই ঘরের পিলার। সুতরাং একটি রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীরা একে অপরের পরিপূরক। দেশে সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা দুর্বল থাকলে যেমন সুস্থ সবল রাজনীতি আশা করা যায় না, তেমনি রাজনীতি দুর্বল থাকলে দেশের সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীরাও তাঁদের যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হন না। দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনকাল এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমরা দেখেছি এই পলাতক ফ্যাসিবাদীদের শাসনকালে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সেই ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে সক্রিয়ভাবে আবির্ভূত হয়েছিল। দেশে সে সময় গুম, খুন, অপহরণ, দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার এমনকি আয়নাঘরের মতো বন্দিশালার বিষয়েও তাদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ প্রতিবাদ করার মতো সাহস পায়নি, কিংবা করেনি। বরং আমরা দেখেছি তাদের উল্টোভাবে ফ্যাসিবাদের অপকর্মের পক্ষে জাস্টিফাই বা বয়ান তৈরি করতে।’ বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর বিগত দেড় দশকের অন্ধকার অতীত থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য পেশাজীবীদের উচিত নিজেদের পেশার ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা অর্জন করে যথাযথ ভূমিকা রাখা। বিএনপিও মনে করে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের বিশিষ্ট পেশাজীবীদের কাজে লাগানোর বিরাট সুযোগ রয়েছে এবং বিএনপি সে সুযোগটা কাজে লাগাতে চায়। সে লক্ষ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গুণগত সংস্কারের একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচন চান তাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, যা শেষ হয়ে যায়, সেটা সংস্কার নয়। কারণ সংস্কার কখনো শেষ হয় না।