বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফ করা ১৪টি প্রতিষ্ঠান আজ থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ হবে। ছাঁটাইকৃত সব শ্রমিকের প্রাপ্য পাওনা আইন ও বিধি অনুযায়ী ৯ মার্চ হতে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
এদিকে গতকাল বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই করা এক নোটিসে বলা হয়েছে, কাজ না থাকায় কারখানার সব শ্রমিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ছাঁটাই করা হলো। গতকাল সচিবালয়ে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সংবাদ সম্মেলনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফকৃত ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সব শ্রমিক ও কর্মচারীর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওনাদি পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লে-অফ ১৪ প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার পাওনা বাবদ মোট ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে অর্থ বিভাগের পরিচালন ব্যয় খাত থেকে ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় তহবিলের বিভিন্ন হিসাব থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিক-কর্মকর্তাদের পাওনা পরিশোধে কোনো ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায়নি। সম্পূর্ণ হিসাব-নিকাশে যেটা এসেছে সেই টাকা আমরা জোগাড় করতে পেরেছি। রোজার মাঝামাঝিতে সবাই যার যার পাওনা পেয়ে যাবেন। উপদেষ্টা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদায়) লুৎফে সিদ্দিকী।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এখন দুই পরাশক্তির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। দ্রুত আমরা বিদেশের বিনিয়োগকারী পাব, যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন। কাজেই আপনারা হতাশ হবেন না। যারা থেকে যাবে তাদের কিছু না কিছু একটা গতি হবেই ইনশাআল্লাহ। বেক্সিমকোর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, দয়া করে আপনারা এমন কিছু করবেন না, যে কারণে আমাদের কঠোর হতে হয়। আমরা কঠোর হতে চাই না। সঙ্গে আমি শ্রমিকদের অনুরোধ করব, ওনারা যাতে পরিস্থিতিটা বোঝেন। আপনারা প্রত্যেকেই দেশপ্রেমিক। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। যাদের সঙ্গে দেখা হয়নি, তাদের আমি সময়মতো ডাকব। আপনারা এমন কিছু করবেন না বা এমন কিছু করতে দেবেন না, যার কারণে আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই করা নোটিসে বলা হয়, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, সারাবো, কাশিমপুর, গাজীপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো লিমিটেড (ইয়ার্ন ইউনিট-১ ব্যতীত) ও এর সংশ্লিষ্ট অপর ১৩টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কারখানায় কোনো কাজ না থাকার কারণে গত ১৬ ডিসেম্বর এবং ৫ ফেব্রুয়ারি হতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক কারখানাগুলো লে-অফ ঘোষণা করা হয়। কোনোভাবেই কাজের সংস্থান না থাকায় কারখানাগুলো ১৬ (৭) ধারা এবং তদানুযায়ী ২০ (৩) ধারা মোতাবেক কারখানার সব শ্রমিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ছাঁটাই করা হলো এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করা হলো।