চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র প্রেস সচিব শফিকুল আলম। স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনো উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি। নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র প্রেস সচিব বলেন, এপ্রিল মাস থেকে কালবৈশাখি ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এরপর জুনে বর্ষাকাল। ফলে ওই তিনটা মাস (এপ্রিল থেকে জুন) নির্বাচনের জন্য উপযোগী না। ফলে আমাদের ধারণা- নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে, অথবা আগামী বছরের মার্চের মধ্যে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার দেখবে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, এখনো বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) রাত থেকেই কম্বাইন্ড প্যাট্রোল শুরু হওয়ার কথা। আমরা আশা করছি, এর ফলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নতি ঘটবে। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে জামায়াত আমিরের প্রতিবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র প্রেস সচিব বলেন, প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। তবে সেটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে হোক এবং এ কারণে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় সেটি আমরা চাই।
তিনি বলেন, জামায়াত নেতার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। এটা জুডিশিয়ারি বিষয়, তারাই দেখবে। কক্সবাজারে গুলিতে একজন নিহতের ঘটনা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে সিনিয়র প্রেস সচিব বলেন, এ বিষয়ে আইএসপিআর বক্তব্য দিয়েছে। এ বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
বন্দুকের গুলিতে রংপুরে ছাত্র নিহতের ঘটনায় সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আবারও গুলিতে নিহতের ঘটনা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন কি-না জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে সিনিয়র প্রেস সচিব বলেন, আইএসপিআরের মাধ্যমে দুটি বক্তব্য এসেছে। এটি একটি আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয়। মৃত্যুর ক্ষেত্রে যেটা হয়, এটা ইনভেস্টিগেট করা হয়। এটিও তদন্ত করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে রংপুরে গুলিতে ছাত্র নিহতের ঘটনা মেলানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সেটা ছিল ঠান্ডা মাথায় খুন, আমরা সবাই তা দেখেছি।
সংস্কার বিষয়ে শফিকুল আলম জানান, সব রাজনৈতিক দলের কাছে সংস্কার প্রস্তাবের হার্ডকপি পাঠিয়ে দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো পর্যন্ত তথ্য উপদেষ্টা পদত্যাগ করেনি। উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হবে কি না সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বলে জানান প্রেস সচিব। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে ই-ফাইলিং চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর ফলে দুর্নীতি কমবে বলে দাবি করেন তিনি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করা হবে এমন তথ্য দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গৃহীত সব প্রকল্পে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এর ফলে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে। এরই মধ্যে বিগত সরকারের গৃহীত মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। হিসাব করে দেখা গেছে এখান থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার কমানো সম্ভব। সে কারণে বড় প্রকল্পগুলো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মূল্যায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।