অবশেষে জালে আসছেন বিতর্কিত নির্বাচনের সেই কুশীলবরা। বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল তিন সচিবসহ ২৩ কর্মকতাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া যারা ডিসি ছিলেন এমন ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চারজন ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর যে নির্বাচন, সেটাকে আমরা কেউ বলি বিতর্কিত, কেউ বলি দিনের ভোট রাতে ইত্যাদি। এসব জায়গায় রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় সরকার তিন মেয়াদে থাকার কারণে বর্তমানের এ দুরবস্থায় পড়েছি। তারা (ওই সময়ের ডিসিরা) অনেক বড় নেগেটিভ ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো একজন ডিসিও বলেননি আমি প্রতিবাদ করব, রিটার্নিং অফিসার থাকব না, রিজাইন করলাম, কাজ করব না। সিনিয়র সচিব বলেন, যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম, তারা ওএসডি হবেন। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি, তারা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবেন। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে, তাদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। তিনি জানান, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করার অভিযোগে যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আছে বা যারা আইনের বাইরে গিয়ে অতিরঞ্জন কাজগুলো করেছেন, তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী সাজা পাবেন।
২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি। ওখান থেকে পাওয়ার পর আমাদের যে ব্যবস্থা- যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম হবে তাদের ওএসডি, যাদের ২৫ বছরের বেশি তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। সামনের ভোট ইস্যুতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কী বার্তা দিতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, ডিসিরা তিন দিনের ডিসি সম্মেলনে ছিলেন। তাদের এ মেসেজ দিতে চাচ্ছি- আপনারা রিটার্নিং অফিসার হবেন, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাহসের সঙ্গে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। যারা করবেন না, তারা এ মেসেজ পেয়ে যাবেন যে, না হলে কী ফল হবে!
তিন সচিব বাধ্যতামূলক অবসরে : গতকালের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, ওএসডি থাকা সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামানকেও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা, মো. হামিদুল হক, এস এম আলম, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, এনামুল হাবীব, তন্ময় দাস, মো. শওকত আলী, মো. তোফায়েল আহম্মেদ, মো. আবদুল আওয়াল, ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, ফয়েজ আহম্মেদ, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, উম্মে সালমা তানজিয়া, রাব্বী মিয়া, ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, কামরুন নাহার সিদ্দীকা, মো মাসুদ করিমকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে ছিলেন। এ ছাড়াও যুগ্মসচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং ডিসি হিসেবে জামালপুরে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত উপসচিব আহমেদ কবিরকেও বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। এর আগে গতকাল ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বুধবার ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা যুগ্মসচিব পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে পৃথক প্রজ্ঞাপনে গতকাল খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবদুল খালেককে সচিব করে পার্বত্য ও চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।