দুই সপ্তাহ ধরে চলা তুমুল আলোচনার পর জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ৩০) অংশ নেওয়া দেশগুলো শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিশ্ব ঐক্য বজায় রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়ে কিছুটা শিথিল শর্ত মেনে নিয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) ব্রাজিলের আমাজন রেইনফরেস্টে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মার্কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে প্রায় ২০০টি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে এই চুক্তি অনুমোদন করে।
সমাঝোতায় পৌঁছানোর পর এক প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এই চুক্তিকে ‘বহুপাক্ষিকতার বিজয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, এটি প্রমাণ করে যে বিভক্ত বিশ্বও সংকটের সময়ে একত্রিত হতে পারে। তবে ইউরোপীয় মন্ত্রীরা স্বীকার করেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ভেঙে পড়া রোধ করতে তারা কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই চুক্তি মেনে নিয়েছেন।
চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি শব্দটি স্পষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়নি, বরং পূর্ববর্তী একটি চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই আপোসের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ যেমন সৌদি আরব এবং কয়লা উৎপাদক ভারতের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তবে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এই চুক্তিকে ‘অসম্পূর্ণ, তবে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
চুক্তির শর্ত শিথিল হওয়ায় বেলেমে ইউরোপীয় মন্ত্রীরা হতাশা প্রকাশ করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু প্রধান ওপকে হোয়েকস্ট্রা বলেন, গোপন করব না যে আমরা আরও বেশি কিছু পেতে চেয়েছিলাম, তবে সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ভেঙে পড়া রোধ করতে এই আপস করা হয়েছে।
তবে চীনের প্রতিনিধিদলের প্রধান লি গাও এই শীর্ষ সম্মেলনকে সফল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে এই সাফল্য অর্জন করেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সংহতি প্রদর্শন করতে এবং যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে চায়।
ভারত বেসিক জোট ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং চীন এর পক্ষ থেকে একটি ‘অর্থপূর্ণ’ চুক্তির প্রশংসা করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি দেশের একটি ব্লক। ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির জোট বলেছে যে চুক্তিটি ‘অসম্পূর্ণ, কিন্তু প্রয়োজনীয় অগ্রগতি’ যা ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
আলোচনার সময় অনেকগুলো দেশ তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুস্পষ্ট কৌশল ছাড়া চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি শব্দটি স্পষ্টভাবে ব্যবহার না করে শুধু পূর্ববর্তী একটি চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
কপ৩০ সম্মেলনের সভাপতি আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো এই আপস নিয়ে বলেন, যারা আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তাদের জন্য তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী ‘রোডম্যাপ’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
অতিরিক্ত সময়ের আলোচনা ও তীব্র দর কষাকষির পর ঐকমত্য রক্ষা করতে জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধের কঠোর শর্তগুলো শিথিল করেই এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
সূত্র: এএফপির
বিডি প্রতিদিন/কামাল