দুর্দান্ত প্রতাপে তারা অভিনয় করতেন যাত্রা মঞ্চে, জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। পরে একসময়ে এলেন চলচ্চিত্রে। এখানেও বেশ সুনাম কুড়ালেন। যদিও এমন শিল্পীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। যাত্রা থেকে চলচ্চিত্রে আসা কয়েকজন শিল্পীর কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
আনোয়ার হোসেন
যাত্রাশিল্পের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সিনিয়র যাত্রাশিল্পী মিলনকান্তি দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অভিনেতা আনোয়ার হোসেন পঞ্চাশের দশকে জীবনে প্রথম যাত্রামঞ্চে অভিনয় করেন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চরিত্রে। এ চরিত্রে অভিনয় করে এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি ‘মুকুটহীন নবাব’ খ্যাতি পান।
এরপর অসংখ্যবার তিনি নবাব চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি যাত্রাপালায় অভিনয় করেন। পরে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতেও নবাব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ননী দাস নির্দেশিত ‘এক টুকরো জমি’ নাটকে এবং ১৯৬১ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন এবং চলচ্চিত্রের অভিনয়ে থিতু হন।
আনোয়ারা
যাত্রাশিল্পী মৃণালকান্তি দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অভিনেত্রী আনোয়ারা প্রথম জীবনে কয়েকটি যাত্রাপালায় অভিনয় করলেও সংখ্যায় তা বেশি ছিল না। আনোয়ারা নবাব সিরাজউদ্দৌলা যাত্রায় আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন এবং সুখ্যাতি পান। পরে খান আতা পরিচালিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে আলেয়া চরিত্রে অভিনয় করেই প্রশংসিত হন। ১৯৬১ সালে আনোয়ারা ফজলুল হকের ‘আজান’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিনয় শুরু করেন।
অঞ্জু ঘোষ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে অঞ্জু ঘোষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গান গাইতেন। ১৯৮২ সালে এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে অঞ্জুর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রের অভিনয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ১৯৯৬ সালে তিনি কলকাতায় পাড়ি জমান। সেখানে চলচ্চিত্র ও যাত্রাপালায় নিয়মিত অভিনয় করছেন অঞ্জু।
অরুণা বিশ্বাস
প্রখ্যাত যাত্রাশিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাস এবং জ্যোৎস্না বিশ্বাসের কন্যা অরুণা বিশ্বাস। বাবা-মায়ের মতো তিনিও যাত্রাপালায় অভিনয় করেন। এ ছাড়া মঞ্চনাটকেও তার সফল যাত্রা ছিল। ১৯৮৬ সালে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত অরুণা বিশ্বাসের প্রথম সিনেমা ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’। তার বিপরীতে ছিলেন বাপ্পারাজ। এরপর ‘দুর্নাম’,‘সম্মান’, ‘কৈফিয়ত’, ‘দংশন’, ‘চরম আঘাত’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’সহ আরও বহু সিনেমায় অভিনয় করেন অরুণা বিশ্বাস।
সিরাজ হায়দার
অভিনেতা সিরাজ হায়দার একাধারে একজন মঞ্চ, যাত্রা ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন। ১৯৬২ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন টিপু সুলতান শিরোনামের নাটকে তিনি প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন। আশির দশকে নারায়ণ ঘোষ মিতার সুখের সংসার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় সিরাজ হায়দারের। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন মঞ্চ ও যাত্রাপালায়ও অভিনয় করেছেন।
আরও যারা
আমীর সিরাজী (রাধাকৃষ্ণ, পাতাল বিজয়সহ কয়েক শ চলচ্চিত্র), মিলনকান্তি দে (আলিঙ্গন, তোমার আমার চলচ্চিত্রসহ আরও কয়েকটিতে), পংকজ বৈদ্য সুজন (উজান ভাটি, সাম্পানওয়ালাসহ বেশ কয়েকটি) সবিতা চৌধুরী (আনোয়ারাসহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে), শবরী দাশ গুপ্তা (রাক্ষসসহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে), মঞ্জুশ্রী, কল্পনা, শর্বরী, নার্গিস প্রমুখ।