অকালে ঝরে গেছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। বিশ্বের যেসব কণ্ঠশিল্পী অকাল প্রয়াত হয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
নাজিয়া হাসান
নাজিয়া হাসান। জন্ম ৩ এপ্রিল ১৯৬৫ সালে। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি পপ শিল্পী। সফল সংগীত জীবনের মাধ্যমে নাজিয়া উপমহাদেশের কিংবদন্তি একজন শিল্পী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলেব্রিটিদের একজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এবং প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। নাজিয়া মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করে সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স বিজয়ী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ও তার ভাই জোহেব হাসান ডিস্কো দিওয়ানে নামক পপ অ্যালবাম প্রকাশ করে আলোড়ন ফেলে দেন। এটি ছিল সে সময়ের এশিয়ার বেস্ট সেলিং পপ অ্যালবাম। যৌবনেই তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ২০০০ সালের ১৩ আগস্ট মাত্র ৩৫ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।
হ্যাপী আখন্দ
হ্যাপী আখন্দ। জন্ম ১২ অক্টোবর ১৯৬৩ সালে। তাকে বাংলাদেশি সংগীতের বরপুত্র বলা হতো। তিনি আর ডি বর্মণ, আব্বাস উদ্দীন, মান্না দে, সমর দাশের মতো সংগীতজ্ঞের প্রশংসা আর স্নেহ অর্জন করেছিলেন নিজ যোগ্যতায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার হাতে গিটারের তাল ধরা দেয়। শুরুর দিকে হ্যাপী আখন্দ ভাই লাকী আখন্দের সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন তবলা বাজানোর জন্য। একসময় হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি অকালে মারা যান।
জুয়েল
বাংলাদেশে আশির দশকের শুরুতে কয়েকজন তারুণ্যদীপ্ত কণ্ঠশিল্পীর আবির্ভাব ঘটে, যাদের গানে সে সময়ের তরুণ-তরুণীরা উদ্বেলিত হয়-বিমোহিত হয়। তেমনি একজন কণ্ঠশিল্পী ছিলেন জুয়েল। মিষ্টিমধুর-শ্রুতিময় কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন জুয়েল। তাঁর কণ্ঠ জাদুতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ছুঁয়েছিলেন জনপ্রিয়তার উচ্চাসন। প্রতিভাবান মেধাবী, ক্ষণজন্মা এই কণ্ঠশিল্পী বেশি সময় পাননি, তাঁর প্রতিভা স্ফুরণের। তিনি ১৯৮৬ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২২ বছর। জুয়েল ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
মাইকেল জ্যাকসন
মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন, জন্ম ২৯ আগস্ট ১৯৫৮। তিনি ছিলেন মার্কিন সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক এবং ব্যবসায়ী। মাইকেল মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে- অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টোরি (১৯৯৫)। পপ সংগীতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় অথবা সংক্ষেপে তাকে এম জে নামে অভিহিত করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ জুন মাত্র ৫১ বছর বয়সে মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন পড়ে যায়।
খালিদ হাসান মিলু
খালিদ হাসান মিলুর জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯৬০ সালে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার আদর্শপাড়া গ্রামে। মিলুর সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৮০ সালের প্রথমার্ধে। তার প্রকাশিত একক অ্যালবাম সংখ্যা ১২টি, মিক্সড-ডুয়েট অ্যালবাম সংখ্যা প্রায় ১২০টি। তিনি প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি সর্বমোট প্রায় ১৫০০-এর মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মিলু ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি।
শেখ ইশতিয়াক
১৯৬০ সালে জন্ম এই গুণী শিল্পীর। সুর ও সংগীতায়োজনের প্রচেষ্টা ছিল ছোটবেলা থেকেই। ১৯৭৪ সালের দিকে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই প্রথম ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন তিনি। ব্যান্ডের নাম রাখলেন ‘সন্ন্যাসী’। বিভিন্ন মঞ্চে, অনুষ্ঠানে গান করতে থাকে সন্ন্যাসী। ধীরে ধীরে গিটারিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন শেখ ইশতিয়াক। ১৯৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার এই স্বল্প সংগীত জীবনে আমাদের উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব গান।