‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না, ও প্রেম করতে দুদিন ভাঙতে একদিন এমন প্রেম আর কইরোনা...’ শিল্পীর এমন দরদভরা আকুতি কি সব তারকার কর্ণকুহরে পৌঁছে?...মনে হয় না। তা না হলে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া, তারপর বিয়ের পিঁড়িতে বসা, এরপরও অনেকের সেই প্রেমের সংসার খুব বেশিদিন টেকে না। কিন্তু কেন? সাধারণ মানুষের এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তাজুল ইসলাম। তার মতে, ‘শোবিজের মানুষেরা সাধারণত আবেগপ্রবণ। মানুষের তো দুটি সত্তা থাকে-একটা আবেগী, অন্যটা যৌক্তিক। মানুষের জীবনে দুটোরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু আবেগী সত্তাটা যাদের বেশি তারাই বেশি সমস্যায় পড়েন। সংসারে অনেক কিছু মানিয়ে নিতে হয়। প্রেম করে বিয়ে করলেও সাধারণ মানুষ যতটুকু মানিয়ে নিতে পারেন তারকারা তা পারেন না। তারা বিয়ের বাইরে প্রেম করতে খুব ভালো পারেন। বিয়ের পর মানুষের মধ্যে দায়বদ্ধতা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, কম্প্রোমাইজ এসব দেখা দেয়। কিন্তু অনেক তারকার মধ্যে এ ব্যাপারগুলোর ঘাটতি থাকে। বাস্তব জীবনে মানুষ যে অন্যরকম, এটা তাদের অনেকেরই উপলব্ধিতে থাকে না। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মুগ্ধতা ও মোহ ভেঙে যায়। তারকারা মুক্ত জীবনযাপন করেন। সাধারণ মানুষের যেমন সংসার করার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে, প্রেম করে বিয়ে করলেও তাদের মধ্যে তা থাকে না। সংসারটা করতেই হবে এ ব্যাপারে তাদের একটা শিথিলতা আছে। আর্থিক ও সামাজিকভাবে বাধ্যবাধকতা থাকে না যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। তাই তারকাদের প্রেমের সংসার মুহূর্তেই তাসের ঘর হয়ে যায়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
গত বুধবার বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কণা। ওইদিন রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা দেন তিনি। জানা গেছে, দীর্ঘ সাত বছর প্রেম করে বিয়ে করেন কণা। ফেসবুকে এক পোস্টে কণা লেখেন, ‘আমি আপনাদের ভালোবাসার কণা। জন্ম, মৃত্যু সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ঠিক তেমনি যে কোনো বিচ্ছেদও হয় তাঁরই ইশারায়। আমার সব শুভাকাক্সক্ষী এবং প্রিয়জনদের উদ্দেশে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি জানাচ্ছি যে, দীর্ঘ ছয় বছরের বিবাহিত জীবনের পর আমি এবং গোলাম মোহাম্মদ ইফতেখার গহিন গত ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করেছি।’
তারকাদের প্রেমের বিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসলেই তাসের ঘর। যেমন প্রেম করে বিয়ে করা দুজন ঘরভাঙা তারকার কথা ছিল এমন- সংগীতশিল্পী হৃদয় খান দীর্ঘদিন ধরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মিডিয়ার মেয়ে সুজানাকে। এ তারকা দম্পতির বিয়ে এক বছরও টেকেনি। কারণ হিসেবে তখন সুজানা জানান, পারস্পরিক সমঝোতা না হওয়া। সুজানা বলেছিলেন, ‘প্রথম দিকে ও আমাকে ভালোবাসলেও পরে বুঝেছি তার ভালোবাসা ছিল মুখে মুখে। ওর সঙ্গে আমার মানসিক মিল কখনোই হয়নি। সংসার করার জন্য ওর আরও ম্যাচিউরিটি দরকার। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ওর কাছ থেকে কখনোই সম্মান পাইনি। আমার কাজে স্বাধীনতা পাইনি। এ কারণেই ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।’ পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। আবার এ বিয়েও ভেঙেছে। বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে সুবর্ণার পরকীয়াকেই এর জন্য দায়ী করেন অনেকে। পরে সুবর্ণা- সৌদ বিয়ে করেন। সে সময়ে সুবর্ণা বলেছিলেন, ‘আমরা প্রেম করে বিয়ে করলেও ফরীদির ধূমপান ও মদ খাওয়ার কারণেই ফরীদির সংসার ছেড়েছি আমি।’ আরেক আলোচিত প্রেমের বিয়ের বিচ্ছেদ হচ্ছে ব্যান্ড তারকা জেমস এবং রথির সংসারের ভাঙন। সে সময়ে জেমস মজে গিয়েছিলেন প্রবাসী এক তরুণীর প্রেমে। আর এতেই ভেঙে যায় তাদের প্রেমের বিয়ের সংসার। এ তালিকায় আরও আছেন রবি চৌধুরী ও ডলি সায়ন্তনীও। সে সময় শোনা গিয়েছিল রবি চৌধুরীর পরকীয়ার কারণেই ডলির সঙ্গে প্রেমের বিয়ের সংসার ভাঙে রবির। তবে সবাইকে ছাপিয়ে প্রেমের বিয়ের সবচেয়ে বড় ভাঙনের শব্দ তোলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। দীর্ঘদিন প্রেম করে ২০০৮ সালে তিনি বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে। তাদের ঘরে একটি সন্তানও জন্ম নেয়। কিন্তু চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে ২০১৭ সালে অপুকে ডিভোর্স দেন শাকিব। এরপর বুবলীকে বিয়ে করলেও তাদের একটি সন্তান জন্মের পর প্রেম করে বিয়ে করা বুবলীকেও ছেড়ে যান শাকিব। তারকাদের প্রেম-বিয়ে ভাঙার তালিকাটা অনেক দীর্ঘ। যেমন- পরীমণি-রাজ, মাহিয়া মাহি-অপু-রাকিব, আরিফিন শুভ-অর্পিতা, মোনালিসা-ফাইয়াজ, এজাজ মুন্না-মম, ফয়সাল-জয়া, অপি-উজ্জ্বল, অপূর্ব-প্রভা, হিল্লোল-তিন্নি, তারিন-সোহেল আরমান, বিজরী-ইমন, দেবাশীষ-তানিয়া, তাজিন-এজাজ মুন্না, মিমো-রানা, ন্যান্সি-সৌরভ, শমী-রিঙ্গো, রিয়া-ইভান, অমিতাভ রেজা-জেনি, মিঠু বিশ্বাস-মৌসুমী নাগ, আনজাম মাসুদ-রুমানা, রোকেয়া প্রাচী-আসিফ নজরুল, তারানা হালিম-আহমেদ রুবেল, আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েত, পারভেজ সানজারি-মিলা, ঝুনা চৌধুরী-নাহিদ ফেরদৌস মেঘনা, শবনম ফারিয়া-অপু, নকীব খান-সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ-রুনা, হাবিব-রেহান, তাহসান-মিথিলা, শখ-নিলয়, সাগর-শম্পা, তমা মির্জা-হিশাম চিশতি, বাঁধন-সনেট, নোভা-রায়হান, স্পর্শিয়া-রাফসান, তানিয়া-টুটুল, জসিম-সুচরিতা, রোজী-আবদুস সামাদ, সোহেল-দিতি, আলমগীর কবির-জয়শ্রী, রোমানা-আনজাম মাসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, আলমগীর-খোশনূর, হুমায়ূন আহমেদ-গুলতেকিন আহমেদ, নাদিয়া-শিমুল, আলাউদ্দিন আলী-সালমা আলী, শাকিল খান-জনা, জহির রায়হান-সুমিতা দেবী। আরও অনেক দম্পতি আছেন তালিকায়। কিন্তু কেন এ প্রেমের বিয়েতে বিচ্ছেদ? খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সবার ঘটনাই প্রায় সমান। বিয়ে করে সুখী ছিলেন না এসব দম্পতি। তাদের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়েছে উচ্চাকাক্সক্ষা, লোভ, হতাশা, অর্থ, পরকীয়া, মানসিক অশান্তি-সবকিছুই। সব শেষে বিচ্ছেদই চূড়ান্ত সমাপ্তি।