প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তাঁকে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়ার সব মুসলমান স্বপ্ন দেখে যদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও নবী (সা.)কে জীবনে একনজর দেখতে পেতাম! প্রিয় রসুল (সা.) কেমন ছিলেন, তাঁর আকার-আকৃতি কেমন ছিল- এ বিষয়ে অনেক সাহাবি থেকে বর্ণনা রয়েছে। হজরত আলী (রা.) যখনই মহানবী (সা.)-এর আকৃতির বর্ণনা দিতেন, তখন বলতেন, নবী (সা.) অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন লোকদের মধ্যে মধ্যম আকৃতির। তাঁর মাথার চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তাঁর চেহারা একেবারে গোল ছিল না। বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদা সংমিশ্রিত। চক্ষুর বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা লম্বা। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। গোটা শরীর ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বক্ষ হতে নাভি পর্যন্ত লম্বা ছিল। হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু ছিল মাংসে পরিপূর্ণ। যখন তিনি হাঁটতেন তখন পা পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উচ্চ স্থান থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনো দিকে তাকাতেন তখন ঘাড় পূর্ণ ফিরিয়ে তাকাতেন। তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুয়ত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। বস্তুত তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যিন (নবী আগমনের ধারাবাহিকতা সমাপ্তকারী)। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দাতা, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত। যে ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তাঁর সঙ্গে মিশত, সে তাঁকে অনেক ভালোবাসতে থাকত। মহানবী (সা.)-এর গুণাবলি বর্ণনাকারী সাহাবি এই কথা বলতে বাধ্য হন, আমি তাঁর পূর্বে ও পরে তাঁর মতো সুন্দর কাউকে কখনো দেখতে পাইনি (তিরমিজি)। অপর হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) যেই রাস্তা দিয়ে চলে যেতেন, পরে কেউ সেই পথে গেলে সে অনায়াসে বুঝতে পারত মহানবী (সা.) ওই পথে গমন করেছেন। আর এটা তাঁর গায়ের সুগন্ধির কারণে অথবা বর্ণনাকারী বলেন তাঁর ঘামের ঘ্রাণের কারণে (দারেমি)। রসুলে কারিম (সা.)-এর আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, একবার আমি চাঁদনি রাতে মহানবী (সা.)-কে দেখলাম। অতঃপর একবার রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর মনে হলো (তিরমিজি ও দারেমি)। হজরত কা’ব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রসুল (সা.) যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন তখন তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তাঁর মুখমণ্ডল চাঁদের টুকরো। বস্তুত আমরা সবাই সেটা অনুভব করতে পারতাম (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর সম্মুখের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথাবার্তা বলতেন, তখন মনে হতো ওই দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে (দারেমি)। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) থেকে সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি, মনে হতো যেন সূর্য তাঁর মুখমণ্ডলে ভাসছে। আর রসুল (সা.) অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তাঁর চলার সময় মনে হতো মাটি যেন তাঁর জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তাঁর সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মে চলতেন (তিরমিজি)। হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ের উভয় গোড়ালি ছিল হালকাপাতলা। তিনি মৃদু হাসি ছাড়া উচ্চৈঃস্বরে হাসতেন না। আর আমি যখনই তাঁর দিকে তাকাতাম, তখন মনে মনে বলতাম, তিনি চক্ষুতে সুরমা লাগিয়েছেন। অথচ তখন তিনি সুরমা ব্যবহার করেননি (তিরমিজি)। মোট কথা প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আরবের অন্ধকার যুগের মানুষদের তিনি আলোর পথ দেখিয়েছেন। হেদায়েতের আলোয় আলোকিত করেছেন। মানবতা শিখিয়েছেন। ভদ্রতা শিখিয়েছেন। আইয়ামে জাহেলিয়াত থেকে মুক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ যেন আমাদের স্বপ্নে হলেও মহানবী (সা.)কে জীবনে একবার দেখার সৌভাগ্য নসিব করেন। আমিন!
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা