মহান আল্লাহ সৃষ্টির সূচনার পূর্ব থেকেই এক ও অদ্বিতীয় সত্তা অবস্থায় বিরাজমান। তিনি তাঁর সমগ্র গুণাবলির ধারকরূপে সর্বপ্রথম নুরে মোহাম্মদি তথা হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নুর সৃষ্টি করেন। হজরত রসুল (সা.) ফরমান ‘আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃজন করেছেন।’ (সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা ৩) কিন্তু জগতের আল্লাহ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুকে মোহাম্মদ নামে হিজরিপূর্ব ৫৩ সন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবে প্রেরণ করেন। তাঁর আগমনের পূর্বাভাস তাওরাত, ইনজিল ও পবিত্র কোরআনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
তাওরাত : ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, তা হলো : ‘‘The Lord your God will raise up for you a prophet like me from among you, from your brothers-it is to him you shall.’ (Dueteronomy, 18:15) অর্থাৎ ‘তোমাদের প্রভু ঈশ্বর তোমাদের ভ্রাতৃদিগের মধ্য থেকে আমার (মুসা) মতোই একজন নবী উত্থিত করবেন, তাঁর কথা তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।’ তাওরাতে আরও বর্ণিত আছে, ‘‘I will raise up for then a prophet like you from among their brothers. And I will put my words in his mouth and he shall speak them all that I command him. And whoever will not listen to my words that he shall speak in my name, I myself will require it of him.’ (Dueteronomy, 18 : 18-19)] ঈশ্বর বলেন : ‘আমি তাদের ভ্রাতৃদিগের মধ্য থেকে তোমার (মুসা) মতোই একজন নবী উত্থিত করব এবং তাঁর মুখে আমার বাণী প্রকাশ করব। তিনি তোমাদের আমি যা আদেশ করব তাই শোনাবেন এবং এটা অবশ্যই ঘটবে যে তাঁর মুখ নিঃসৃত আমার সেই বাণী যারা শুনবে না, তাদের আমি শুনতে বাধ্য করব।’
ইনজিল : খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ ইনজিলে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.) বলেন- ‘If you love me, keep my commandments, And I will pray to the Father and he shall give you another comforter that he may abide with you forever.’ (John Chap, 14 : 15-16) অর্থাৎ ‘যদি তোমরা আমাকে ভালোবাস, তবে আমার উপদেশমতো কার্য করিও। আমি স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনা করব, যাতে তিনি তোমাদের আর একজন শান্তিদাতা প্রেরণ করেন- যিনি চিরদিন তোমাদের সঙ্গে থাকবেন।’ অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘Nevertheless I tell you the truth: it is to your advantage that I go away, for it I do not go away, the Advocate will not come to you; but if I go, I will send him to you.’ (John Chap, 16 : 07) অর্থাৎ ‘যা হোক, আমার উচিত যে তোমাদের মঙ্গলের জন্য আমি চলে যাই, কারণ আমি না গেলে সেই শান্তিদাতা আসবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে পাঠিয়ে দেব।’ ইনজিলে আরও বর্ণিত আছে, ‘When the Spirit of truth comes, he will guide you into all truth. He will not speak on his own but will tell you what he has heard. He will tell you about the future. (John Chap, 16:13) অর্থাৎ ‘যা হোক, যখন সেই সত্য-আত্মা আসবেন, তখন তিনি তোমাদের সর্বপ্রকার সত্য পথে চালিত করবেন। কারণ তিনি নিজের কথা কিছুই বলবেন না, কিন্তু যা তিনি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) শুনবেন, তা-ই বলবেন এবং তিনি ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা দেখাবেন।’
পবিত্র কোরআন : হজরত রসুল (সা.)-কে জগতে প্রেরণের পূর্বে আল্লাহ সব নবী-রসুলের কাছ থেকে দয়াল রসুলের প্রতি ইমান আনার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন নবীদের কাছ থেকে যে যা কিছু আমি তোমাদের কিতাব ও হেকমত দিয়েছি এবং তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে যখন একজন রসুল আসবে তখন অবশ্যই তোমরা তাঁর প্রতি ইমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। তারপর তিনি বললেন : তোমরা কী স্বীকার করলে এবং এ বিষয়ে আমার অঙ্গীকার কবুল করলে? তারা বলল : আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন : তাহলে তোমরা সাক্ষী থেক এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম।’ (সুরা আলে ইমরান ৩ : আয়াত ৮১) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘এবং স্মরণ কর, যখন ঈসা ইবনে মরিয়াম বললেন, হে বনি ইসরাইল! আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর রসুল এবং আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের সত্যতা প্রতিপাদনকারী, আর আমার পরবর্তী সময়ে আগমনকারী এমন একজন রসুলের সুসংবাদদাতা যার নাম ‘আহমদ’।’ (সুরা সাফ ৬১ : আয়াত ৬)
লেখক : সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, পিইউবি