পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘(হে রসুল) আপনি তার আনুগত্য করবেন না যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের কাছে লাগায়।’- সুরা আল কালাম ১০, ১১। জিব মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বতের পরিবেশ সৃষ্টিতে যেমন অবদান রাখতে পারে তেমন সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি উসকে দিতে পারে।
সুতরাং জিবকে সংযত রাখাই মানুষের জন্য জরুরি কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস নিশ্চিত এমন ব্যক্তির জন্য যে সামনাসামনি মানুষকে গালাগাল দেয় এবং পেছনে নিন্দা রটাতে অভ্যস্ত।’ সুরা হুমাজাহ : ১।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কেয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ওই ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়।’ মিশকাত।
এ হাদিস দুটি থেকে প্রতীয়মাণ হয়, মানুষের জিব কবিরা গুনাহসমূহের উৎস। মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখোরি, ধোঁকাবাজি, গিবত- তোহমত, অভিসম্পাৎ প্রভৃতি কবিরা গুনাহ মানুষ জিব দ্বারা করে থাকে। জিবের অপব্যবহারের বিষয়ে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘চোগলখোর ও খোঁটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।
হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ মুত্তাফাক আলাইহি, মিশকাত। ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাস করে। জিবের অপব্যবহার ভ্রাতৃত্ববোধকে ধ্বংস করে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো গিবত কী? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুল অধিক জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে আপনার কী অভিমত? তখন তিনি বললেন, তুমি যা বল তার মধ্যে তা থাকলে তুমি তার গিবত করলে। আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে তবে তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে। মুসলিম, মিশকাত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যার অশ্লীলতার ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করেছে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। জিবকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে আখেরাতে তার সুফল মিলবে। হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, নিজের জিব আয়ত্তে রাখো, নিজের ঘরে পড়ে থাকো এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর। মিশকাত। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দ্বিমুখী, কেয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের দুটি জিব হবে।’ (দারেমি, মিশকাত। হজরত উবাদাহ বিন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘১. তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। ২. যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ করবে। ৩. যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় করবে। ৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। ৫. নিজের দৃষ্টি অবনমিত রাখবে এবং ৬. নিজের হাতকে (অন্যায় কাজ থেকে) বিরত রাখবে।’ আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি ভৎর্সনাকারী, অভিসম্পাৎকারী, অশ্লীল গালমন্দকারী ও নির্লজ্জ হতে পারে না।’ মিশকাত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কারও সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা হতে বেঁচে থাকো। কেননা ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা। কারও কোনো দোষের কথা জানতে চেষ্টা করো না। গোয়েন্দাগিরি করো না, ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর হিংসা রেখো না, পরস্পর শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের পেছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাকো।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘পরস্পর লোভ-লালসা করো না।’ মিশকাত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্য মানুষ সম্পর্কে কু-ধারণা পোষণ থেকে দূরে রাখুন। আমিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক