পাবনার চটমোহরে প্রাণ ডেইরির একটি গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ভেজাল দুধ আসার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে প্রাণ গ্রুপ। ওই এলাকার স্থানীয় ভেজাল দুধ সরবরাহকারী সংঘবদ্ধ চক্র প্রাণ ডেইরিকে দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের দুধ সরবরাহ করতে চেয়েছে। এই পরকিল্পনায় ব্যর্থ হয়ে দলটি কৌশলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মীকে হাত করে।
এরপর ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ প্রবেশ করিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করে, যাতে প্রাণ ডেইরির সুনাম নষ্ট হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রাণ ডেইরির নিজস্ব তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। রবিবার রাজধানীর বাড্ডায় প্রাণ ডেইরির প্রধান কার্যালয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘ছাইকোলা ইউনিয়নে অবস্থিত ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টারে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি। এ ঘটনার পরপরই আমরা ওই দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। প্রাথমিক তদন্তে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য জড়িত তিন কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। এ ছাড়া প্রাথমিক অনুসন্ধানে স্থানীয় চারজন দুধ সরবরাহকারীর নাম উঠে এসেছে। আমরা কম্পানির পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, প্রশাসনের অভিযানে ভেজাল দুধ সরবরাহকারীর বাড়িতে সোডা, তেল ও ডিটারজেন্ট পাওয়ার ঘটনাটি প্রাণ মিল্ক কালেকশন সেন্টারের বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার হয়েছে, যা আমাদের অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। অন্য জায়গার ভিডিও কাট করে প্রাণ ডেইরির বলে চালিয়ে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘প্রাণ সব সময় নিবন্ধিত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে এবং দুধ সংগ্রহ করার পর থেকে প্রক্রিয়াজাত হওয়ার আগ পর্যন্ত চারটি ধাপে দুধ পরীক্ষা করে। প্রথম ধাপে গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে মিল্ক অ্যানালাইজারের মাধ্যমে দুধের ফ্যাট, এসএনএফ ও ডেনসিটি টেস্ট করা হয়।
এরপর মাদার হাবে নেওয়ার পর সেখানে কেমিক্যাল, সোডা, তেল, ডিটারজেন্ট, অয়েল, সল্ট, ফরমালিন, পিএইচসহ ১৪ ধরনের টেস্ট করা হয়। নরসিংদীর কারখানায় দুধ নেওয়ার পর আরেক দফা সব ধরনের পরীক্ষা করা হয়। সব শেষে কারখানায় প্যাকেটজাত হওয়ার আগে ল্যাব টেস্টে দুধের গুণগত মান পরীক্ষা করে ভোক্তার কাছে সরবরাহ করা হয়।’
সম্প্রতি পাবনায় যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একেবারে প্রাথমিক স্টেজে গ্রামীণ দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ঘটেছে। খারাপ ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত কোনো দুধ থেকে থাকলে সেটি হাবের টেস্টে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসে এবং সেগুলো নষ্ট করা হয় বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল