নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে আগাম আলু উত্তোলন করে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন কৃষক। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বাজারে নতুন আলু উঠবে। ফলন ও দাম পেলে অতীতের লোকসান উসুল হয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।
অন্যদিকে বড় অংকের লোকসান গুনেও প্রায় সমান তালে গতবারের মত আগাম আলু চাষে ধুম পড়েছে। আগামের পাশাপাশি মাঝারী পর্যায়ের আলুচাষেও থেমে নেই কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কেশবা গ্রামের কৃষক সোরহাব হোসেন সোমবার সেভেন জাতের আগাম আলু উত্তোলন করেছেন। সে ৫৯ শতক জমিতে মাত্র ৫৫ দিনে আলু তুলে ৩৫০ কেজি আলু পেয়েছেন। সাইজে ছোট হওয়ার কারণে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, দেশের মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম আলু তোলা হয়। আগামী ১ সপ্তাহ পরেই এই এলাকায় আলু তোলা পুরোদমে শুরু হবে।
এখানকার কৃষকরা লোকসান গুনলেও পরের বার আরো উদ্যোম নিয়ে আলু চাষাবাদ করে থাকেন। প্রতিবারেই আগাম জাতের আলু চাষ করে ভাল দাম পায় কৃষকরা। এ কারণেই আগাম আলু চাষে হাল ছাড়েন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আগাম আলু চাষ হয়েছে। দুর্গা পুজার আগে বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত কর্দমাক্ত হলেও তেমন মড়ক ধরেনি। আগাম আলুর জন্য আবহাওয়া অনূকুলে। আশানুরূপ ফলন ও কোন ঝামেলা ছাড়া বাজারজাত করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে। এখনো পুরোদমে আমন ধান উঠোনে না তুললেও, ওই জমিতেই বীজ আলু রোপণের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছেন অনেকেই। কৃষকদের ঘরে ঘরে আলু বীজ শোভাবর্ধণ পাচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের গঁজানো বীজ রোপণ করলে তা ৫০ দিনেই হিমাগারে বীজের জন্য রাখতে পারবেন বলে কৃষকরা জানান।
কিশোরগঞ্জের নিতাই মুশরুত পানিয়ালপুকুর এলাকার কৃষক আল-আমিন ৭০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছেন। তার আলুর বয়স ৩৫ থেকে ৫০ দিন হয়েছে। দর নিয়ে শঙ্কা থাকলেও লাভের আশায় তিনি স্বপ্ন বুনছেন।
লোকসানের মুখে থাকা কিশোরগঞ্জ যদুমনি এলাকার আলু চাষী লুৎফর রহমান লুতু মিয়া বলেন, হিমাগারে প্রায় ছয় হাজার বস্তা আলু রেখেছিলাম। প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি তবুও লাভের আশায় এ বছর ১৩ বিঘা উঁচু জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। এবারও ৩০ বিঘা জমিতে বীজ আলু চাষাবাদ করবো। ফলন ও দাম পেলে লোকসান উঠে লাভের মুখ দেখার আশা করছি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৬শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আলুই ৩৪৩০ হেক্টর। মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর চাহিদা বেশি থাকায় এখানকার কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ায় লাভবান হন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা স্থানীয় সেভেন জাতের আগাম আলু ৫৫ থেকে ৬০ দিন বয়সে উত্তোলন শুরু করেন। অল্প সময়ে এ ফসলে কৃষকরা যা লাভ করেন অন্য কোন ফসলে তা আসে না। নতুন আলুর চাহিদা ব্যাপক থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসা শুরু করেছে। আগাম আলুতে কৃষকরা লাভবান হবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম