কক্সবাজারের রামুতে বাঁকখালী নদীর দুই তীরে মঙ্গলবার বিকেলে নেমেছিল উৎসবের বর্ণিল ঢল। অন্তত দশ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম—সব সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য মিলনমেলায়।
দুই শতাধিক বছর ধরে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ ‘স্বর্গের জাহাজ’ বা কল্প জাহাজ ভাসিয়ে আসছেন বাঁকখালী নদীতে। ধর্মীয় এই উৎসবটি এখন হয়ে উঠেছে সর্বজনীন আনন্দ-উৎসবে। বৌদ্ধদের পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও এতে অংশ নিয়ে প্রার্থনা করেন— জগতে সব সংঘাত দূর হোক, সকল প্রাণী সুখী হোক।
ফানুস উৎসবের রঙিন আবহ শেষে এবার প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নদীর বুকে সাজানো হয় একের পর এক দৃষ্টিনন্দন জাহাজ। কারুকার্যময় কাঠ ও কাপড়ে তৈরি জাহাজগুলো নৌকায় বসিয়ে ভাসানো হয় নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে। তখন নদীর দুই তীরজুড়ে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের উল্লাস ও আনন্দধ্বনি।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে শুরু হয় এ বছরের উৎসবের মূল আয়োজন। বিকেল গড়াতেই দর্শনার্থীদের ঢল নামে নদীর দুই পাড়ে। উৎসব ঘিরে তৈরি হয় মেলা, আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ. ম. খালিদ হোসেন। উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া।
উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া এবং রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরফানুল হক চৌধুরী।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। কেউ যদি এই সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তবে ঐক্যবদ্ধভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত এই উৎসবে এবার নদীতে ভাসানো হয় সাতটি কল্প জাহাজ। আলোকসজ্জা, ফানুস ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় রামুর আকাশে ছড়িয়ে পড়ে শত বছরের ঐতিহ্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল বার্তা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল