আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত ও জাতীয়করণের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষকদের এক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট।
তারেক রহমান বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এই অনুষ্ঠানে আমাকে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং খারাপ দৃষ্টান্ত বর্জনই হোক আমাদের আগামী দিনের অঙ্গীকার।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। শিক্ষকগণই হলেন এর অন্যতম হাতিয়ার। সুতরাং হাতিয়ার যদি দুর্বল হয় রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
এ সময় তিনি জানান, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করবে এবং শিক্ষকদের সম্মান নিশ্চিত করবে। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সামর্থ্য অনুযায়ী নিশ্চিত করা হবে।
তারেক রহমান বলেন, অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন আর খারাপ দৃষ্টান্তগুলো বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি সমৃদ্ধ সুন্দর নিরাপদ মানবিকবাংলাদেশ গড়ার কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নই হোক আমাদের এই সময়ের অঙ্গীকার।
তারেক রহমান আরও বলেন, শিক্ষক কর্মচারী ভাই ও বোনেরা বিশ্ব এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে প্রবেশ করেছে। জ্ঞানে বিজ্ঞানে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে সমান এবং মর্যাদার সঙ্গে একটি প্রভাবশালী জাতি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকাই আমাদের সামনে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে অর্থ-বিত্তে মেধা-মননে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র-সরকার প্রশাসন এবং সমাজের নানা বাস্তবতায় একজন শিক্ষক যদি নিজেই নিরানন্দ পরিস্থিতিতে থাকেন তাহলে তার দ্বারা 'জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত' করা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্র এবং সমাজে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি এমপিও কিংবা নন-এমপিও সবমিলিয়ে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমবেশি সম্ভবত প্রায় ৯৫ হাজার। এরমধ্যে সম্ভবত সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। জনসংখ্যার তুলনায় দেশের বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই সংখ্যাকে হয়তো বেশি বলা যাবে না, কিন্তু আমরা সবাই মিলে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত করতেই হবে। একদিকে আমাদের শিক্ষার ভিত্তি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার ভিত্তি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করতে পারি তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুঁথিনির্ভর না রেখে শিক্ষা কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকেই/ব্যবহারিক এবং কারিগরি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
তারেক রহমান বলেন, শিক্ষক শিক্ষিকারা যাতে নিজেকে একজন রোলমডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারেন সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রণয়নে বিএনপি বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বিএনপির কর্ম পরিকল্পনায় শিক্ষকদের আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের শিক্ষক সমাজের বিশেষ করে স্কুল মাদরাসার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সম্মান সমুন্নত করে শিক্ষকতা পেশাকে সুযোগ এবং সম্মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমি আগেও বলেছি শিক্ষকতা পেশা কখনোই 'উপায়হীন বিকল্প' কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতো হতে পারে না। বরং, শিক্ষা দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্মজীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেঁচে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাবেশে আপনাদের অনেকের বক্তব্যে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের প্রসঙ্গ এসেছে। কেউ কেউ আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার কথা বলেছেন। এ ছাড়াও আপনাদের এই সংগঠনের বাইরেও বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি রয়েছে। দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে অবশ্যই একমত। রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না। জনগণের ভোটে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো, কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করবো ইনশাআল্লাহ। একইসঙ্গে প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে 'শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করা হবে।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, শিক্ষকদের দাবি-দওয়ার সবকিছু বিএনপির ৩১ দফার কর্মসূচিতে আছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতি হিসেবে আপনাদের কাছে একটা দাবি আছে, সে দাবিটা হচ্ছে যে আপনারা আপনাদের ছাত্রদেরকে ছাত্রীদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে এমন করে গড়ে তুলবেন, যেন তারা সত্যিকার অর্থেই আদর্শ নাগরিক হতে পারে, নৈতিকতার মধ্যে থাকতে পারে। আমরা সবাই মিলে যেন একটা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিজউদ্দিন চৌধুরী।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আফরোজা বেগম রীতাসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ