নিরাপত্তার জন্য কুষ্টিয়া শহরজুড়ে স্থাপন করা ৬৪টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার একটিও বর্তমানে সচল নেই। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও জনসমাগমস্থলে স্থাপন করা এসব নজরদারি ক্যামেরা বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অচল থাকায় শহরবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগ ভাঙচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার অনেক স্থানেই ক্যামেরা গায়েব হয়ে গেছে। এরপর থেকে সেগুলো আর সচল করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত সংস্কার বা নতুন করে ক্যামেরা স্থাপন করার জন্য বরাদ্দও মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের শুরুতে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ২৩টি স্থানে এসব উচ্চক্ষমতার সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে। মজমপুর ট্রাফিক অফিস, শাপলা চত্বর, একতারা চত্বর, বকচত্বর, বড় বাজার, কাটাইখানা মোড়, হাসপাতাল মোড়, ছয় রাস্তার মোড়, ত্রিমোহিনী থেকে বটতৈল পর্যন্ত বিস্তৃত এসব জায়গায় স্থাপিত ৬৪টি ক্যামেরার ফুটেজ সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল জেলা গোয়েন্দা শাখা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নজরদারির অভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ বেড়েছে। এমনকি শহরে হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনাও ঘটছে। সিসি ক্যামেরা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কাজ জটিল হয়ে পড়েছে।
পৌর নাগরিক অধিকার পরিষদ কুষ্টিয়ার আহ্বায়ক অ্যাড.শামিম উল হাসান অপু বলছেন, দ্রুত ক্যামেরাগুলো সংস্কার করে আবারও শহরজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সিসি ক্যামেরা যেমন অপরাধীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে, তেমনি অপরাধ সংগঠিত হলে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধ সংগঠিত হলেও প্রমাণ রেখে যায়। ফলে দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে ক্যামেরাগুলো অচল থাকায় অপরাধীদের সনাক্তকরণসহ আমাদের কাজ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রযুক্তি না থাকলেও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। অপরাধ দমন কার্যক্রমে স্থবিরতা আসেনি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, “শহরজুড়ে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরাগুলো না থাকায় আমাদেরকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির সামনের ব্যক্তিগত ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ সংগ্রহের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও জানান, “আমি এই জেলায় ছয় মাস আগে যোগ দিয়েছি। শুনেছি, আন্দোলনের সময় ক্যামেরাগুলো ভাঙচুর করা হয়। আমরা সদরদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি যাতে দ্রুত বরাদ্দ আসে এবং সেগুলো সংস্কার করা যায়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাসেল পারভেজ বলেন, “আমাদের শহরে রাতে অনেক সময় সন্দেহজনক লোকজন ঘোরাফেরা করে। ক্যামেরা থাকলে অন্তত নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা ভরসা থাকত।”
শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যামেরাগুলো অচল থাকা পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। তারা মনে করেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা পুনঃস্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সিসি ক্যামেরাগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য এখনো আমাদের কাছে কোনো সরকারি বরাদ্দ আসেনি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা এখন বরাদ্দ দিতে পারছেন না। পৌরসভাকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও এখনই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। শহরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা জরুরি ভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল