নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন, তুলে নেয়া হয়েছে বাম হাতের একটি আঙুলের নখও। এ অবস্থায় পরিবারের দাবি, প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে ঢাকা থেকে এসে খুন হয়েছেন ওই তরুণ। তার রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে ওই প্রেমিকার পরিবারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে এটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল (মধ্যপাড়া) গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বেলা ১১টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন জনৈক অটোরিকশাচালক সুজন। পরে তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান ওই চালক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতিকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুম মারা যান।
তবে, এটি দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকান্ড এনিয়ে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। ঘটনার পর থেকে মাসুমের প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
স্বজনরা জানান, উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মাসুমের। পারিবারিকভাবে মেনে না নেয়ায় তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এরমধ্যে বুধবার (৩০ জুলাই) মাসুম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে বড় বোনের বাসায় গিয়ে ওঠেন। প্রেমিকার বিয়ের খবরে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ৬টার পর লোহাগড়া পৌঁছান মাসুম। সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল মোবাইলফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুম লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি মাসুমের।
অটোরিকশাচালক সুজন জানান, ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনার কোনো চিহ্ন দেখিনি। জিজ্ঞেস করছিলাম, আশপাশের কোনো মানুষ দুর্ঘটনার কথা শোনেননি। সুজনের মতে, মাসুমের আহত শরীর দেখে মনে হয়েছে সম্ভবত তাকে কেউ গাড়ি থেকে ফেলে রেখে গেছে।
এদিকে মাসুম সকালে ঢাকা থেকে ফিরে প্রেমিকার বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছেন চাচা শরিফুল ইসলাম। হয়তো এ কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা তার।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। পরে এ ঘটনায় যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই প্রসঙ্গে কাশিয়ানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.কামাল হোসেন বলেন, নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী থানাধীন মধুমতি সেতু থেকে ঘটনার শিকার মাসুমকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি আমরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এঘটনায় এখনো কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ