উজানের ঢলে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতেই লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। যদিও ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে, তবুও ভাটি অঞ্চলের অনেক এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার অন্তত ১৬টি ইউনিয়নে ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি। রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে চলে গেছে।
পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
মহিষখোচা আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, "স্কুলে গিয়েছিলাম, কিন্তু ক্লাসরুমে পানি থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে।"
একই এলাকার শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “বিদ্যালয়ে পানি উঠায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরাও সমস্যায় পড়েছে।”
গৃহিণী হাওয়া বেগম জানান, “মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ে। চুলাও ডুবে গেছে, রান্নাও বন্ধ।”
হাতীবান্ধার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “হঠাৎ পানি বাড়ায় আমার ধানের জমি ডুবে গেছে। এখন শুধু পানি আর হতাশা।”
তিস্তার পানির চাপ সামাল দিতে ডালিয়া ব্যারাজের সব কপাট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড, লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সনীল কুমার রায় বলেন, “পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে, বড় বন্যার আশঙ্কা আপাতত নেই। তবে নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “প্লাবিত এলাকাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সহায়তা প্রদান করা হবে।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক