গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র স্লোভেনিয়া। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র আমদানি, রপ্তানি ও ট্রানজিট নিষিদ্ধ করেছে। এটি ইউরোপীয় কূটনৈতিক ভূ-দৃশ্যপটে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় স্লোভেনিয়া জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র বাণিজ্যে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষ্ক্রিয়তাই এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার মূল কারণ বলে জানায় দেশটির সরকার।
প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোব বলেন, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রগামী হতে হবে। এমনকি অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে গেলেও।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ঐক্যের অভাবে আজ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সরকার আরও জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা পুরোপুরি অস্বীকার করা হচ্ছে। মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে মারা যাচ্ছে, পানীয় জল, খাদ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ন্যূনতম বেঁচে থাকার শর্তগুলোও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া।
স্লোভেনিয়ার এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ধারাবাহিক পদক্ষেপেরই অংশ। এর পাশাপাশি দেশটি সম্প্রতি দুইজন ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে, যাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
স্লোভেনিয়া জানিয়েছে, তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও কিছু কঠোর জাতীয় পদক্ষেপ নেবে ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে, যাদের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপটি স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের চলমান কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নীকরণের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণে একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ২৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরও প্রায় দেড় লক্ষ।
গাজায় চলছে চরম খাদ্য সংকট। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা একে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে বর্ণনা করছে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল