তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের নিবিড় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বগুড়ার ১২টি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপন করা হয়েছিল বিএস কোয়ার্টার। কর্মরত ব্লক সুপারভাইজার কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য তিন দশক আগে নির্মিত এসব কোয়ার্টার অবহেলা ও অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সম্পদগুলো এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। ফলে কোয়ার্টারগুলোতে সন্ধ্যার পর আসর জমায় নেশাখোর আর জুয়াড়িরা। দীর্ঘদিন কোয়ার্টারগুলো ব্যবহার না করায় তা ঝোঁপ-ঝাঁড়ে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু কোয়ার্টার দখলও হয়েছে। কৃষি বিভাগের উদাসীনতা ও কৃষি কর্মকর্তা ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব কোয়ার্টার ভবন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে কৃষি বিভাগ জেলার ১২টি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে প্রথমে বাফার গোডাউন নির্মান করে। সেগুলোতে কৃষি কাজে ব্যবহৃত ক্যামিক্যাল, ডাইক্লোরোহস নামে কীটনাশক রাখা হত। এখান থেকে সার-বীজ বিতরণ করা হত। এরপর সেগুলো আর গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হয়নি। পরবর্তীতে গোডাউনগুলো সংস্কার করে বিএস কোয়ার্টার নির্মান করা হয়। কোয়ার্টারগুলো বসবাসের জন্য সংশ্ল্ষ্টি এলাকার ব্লক সুপারভাইজারদের নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ অর্থ কর্তন করা হত। ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে সেগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে সেখানে আর কেউ বসবাস করেননি। ওইসময় থেকে এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে কোয়ার্টারগুলো। এছাড়া জেলায় সরকারি সম্পত্তিতে ১২৩টি প্লট রয়েছে। সেখানে কৃষি সেবা, পরামর্শ এবং কৃষকদের কাছে সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ দেওয়ার লক্ষ্যে এই কোয়ার্টারগুলো নির্মাণ করা হয়। সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে এগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সোনাতলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫টি বিএস কোয়ার্টার নির্মান করা হয়। উপজেলার বড় বালুয়া, মধুপুর ও জোড়গাছার কোয়ার্টার স্থানীয়রা জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে। বর্তমানে এগুলো উদ্ধারে কৃষি বিভাগ থেকে মামলা চলমান রয়েছে।
জানা যায়, তিন দশক আগে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ব্লক সুপারভাইজার কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি বিভাগ প্রথমে বাফার গোডাউন নির্মান করে। পরবর্তীতে সেগুলো সংস্কার করে বিএস কোয়ার্টারে পরিনত করা হয়। একটি বিএস কোয়ার্টার দুইটি পরিবারের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়। ভবন নির্মাণের পর ব্লক সুপারভাইজাররা এসব আবাসিক ভবনে না থাকায় অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক বিএস কোয়ার্টার জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কোন কোন কোয়ার্টারের পার্শ্ববর্তী জমির মালিক নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই সুযোগ বুঝে টাঙ্গিয়েছেন নিজেদের সংগঠনের সাইনবোর্ড। এসব কোয়ার্টার এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক আমিনুল মন্ডল জানান, কোয়ার্টারগুলো নির্মাণের পর এক সময় উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দিতেন। তারা কোয়ার্টারগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে এসে বিএস কর্মকর্তারা গ্রাম থেকে শহরের দিকে পাড়ি জমান। ফলে কোয়ার্টার জনশূন্য হয়ে পড়ে। কোয়ার্টারগুলোতে সন্ধ্যার পর আসর জমায় নেশাখোর আর জুয়াড়ি শ্রেণির লোকজন। দীর্ঘদিন কোয়ার্টারগুলো ব্যবহার না করায় তা ঝোঁপ-ঝাঁড়ে পরিণত হয়েছে। দেখলেই মনে হয় এটি যেন ভূতের বাড়ি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, একসময়ের বিএস পদে যারা ছিলেন তারা পদোন্নতি পেয়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা হয়েছেন। তাদের জন্য নির্মাণ করা কোয়ার্টার পরবর্তী সময়ে কোন সংস্কার না করায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরে। তবে জেলার গাবতলী, ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলার বিএস কোয়ার্টারগুলো নতুন করে ট্রেনিং সেন্টার করা হয়েছে।