ফেনী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে প্রতিদিনের যানজট এখন নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ শুরু ও ছুটির সময়ে ট্রাংক রোড, এস.এস.কে রোড, কলেজ রোড, রেলগেইট, হাসপাতাল মোড় এবং শহরের বিভিন্ন মোড়ে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স।
এদিকে শহরের মূলপয়েন্টে ৩৩৯১ বর্গফুট বিশিষ্ট পৌরসভার একটি মোটরসাইকেল পার্কিং থাকলেও যা পর্যাপ্ত সংস্কারের অভাবে আসছে না তেমন কোনো কাজে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের রাস্তাগুলো মূলত সংকুচিত এবং পরিকল্পনাহীন। এর মধ্যে ফুটপাত দখল করে বসা হকার, সড়কের পাশে অবৈধ মোটরসাইকেল পার্কিং এবং বেপরোয়া সিএনজি-রিকশাচালনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সরকারি পার্কিং পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী না থাকাও যানজটের অন্যতম কারণ।
স্কুল শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যেতে মাঝে মাঝে তার বিলম্ব হয়। কখনো কখনো মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে ৩০ মিনিট লাগে। একদিন আমি ২০ মিনিট পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।
একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, জরুরি রোগী নিয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ি হাসপাতাল রোডে। জ্যামে পড়লে কোন দিকে যে ঘুরে বের হব বুঝতে পারি না।
পৌর পার্কিং-এ মোটরসাইকেল রাখা মোঃ হারুন বলেন, ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন ফেনী আসি, নিরাপদে সরকারি জায়গায় ২০ টাকা ফি দিয়ে গাড়ি রাখি, তবে অনেকেই মনমতো করে সড়কে গাড়ি রেখে দেয়। যার ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। তাই পার্কিং স্থান সংস্থার করে ও ফি কমিয়ে এটিকে পুরোপুরি সচল রাখা উচিত।
চাকরিজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, অফিসে যাওয়া-আসায় এই যানজটে যে পরিমাণ সময় ও অ্যানার্জি নষ্ট হয়, তারপর বাসায় ফিরে যেন ক্লান্তি নেমে আসে। গেল কয়েক মাস আগে শহরে যে পরিস্থিতি ছিলো, এখন তার থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সামনে আবার বৃষ্টি বাদলের দিন আসছে। তখন কি অবস্থা হয়, কে জানে!
সিএনজি ড্রাইভার লোকমান বলেন, রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার দখলে। প্রশাসন নিচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। যাত্রীসহ আমরা এই দুর্ভোগে অতিষ্ঠ।
পৌর পার্কিং-এর ইজারাদার মো. ইয়াছিন বলেন, "মানুষ ২০ টাকার ভয়ে গাড়ি পার্কিং না করে, যত্রতত্র রেখে দেয়। আর পার্কিং-স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। সংস্কার করলে আরো বেশি গাড়ি রাখা সম্ভবপর হবে। এই ব্যাপারে পৌর প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।"
ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিকায়ন করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “হকার উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত চালানো হলেও তারা আবার বসে পড়ে। এছাড়া পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে যানজট নিরসন কঠিন। এই সমস্যা দূরীকরণে আমরা দ্রুত কাজ করছি।”
ফেনী ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ারুল আজীম মজুমদার জানান, শহরে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এখনও সীমিত পরিসরে চলছে। তিনি বলেন, আমরা স্কুল টাইমে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করি, তবে সড়কের গঠনগত সমস্যাও এখানে বড় কারণ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল