রাত পোহালেই ঈদ আনন্দে মেতে উঠবে সবাই। একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবে। ছোট বড় সবাই মিলে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি যাবে। এ দিনটিকে ঘিরে মানুষের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। কিন্তু দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে পরিবারের ঈদ ভিন্ন।
ঈদ উপলক্ষে দেশের সব বাজারগুলো জমজমাট, সর্বস্তরের মানুষ যখন প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বরগুনার পাথরঘাটার জেলেপল্লিগুলোতে। ঈদ এলেও যেন ঈদের আনন্দ নেই জেলে পরিবারের মাঝে।
সাগরে মাছ নেই কয়েক মাস ধরে। জেলেদের হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। ঈদের আনন্দ তো দূরে থাক, ঈদের দিন সেমাই বা ফিরনিও অনেক পরিবারে জুটবে না। সন্তানদের নতুন কাপড় চোপড় তো স্বপ্ন।ধারদেনা করে আবারও সংকটে পড়ার শঙ্কায় দিশেহারা জেলেরা। প্রতিবেশীরা বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসলেও জেলে পরিবারের সদস্যরা চেয়ে থাকে।
একদিকে এনজিও, অন্যদিকে মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে জেলেদের। তার ওপর রয়েছে সংসারের খরচ। কোনো কোনো জেলে পরিবারে দুবেলা দুমুঠো ভাতও জুটছে না। সব মিলিয়ে জেলে পরিবারগুলো এখন চরম বিপাকে রয়েছে। এ সময় জেলেপল্লিতে মাছ বিক্রি করে ঈদের উৎসবের আমেজ থাকবে সেখানে জেলেপল্লিতে চরম সংকটের মুখে অভাব অনটনের মধ্যে জীবন-যাপন করছেন জেলেরা, চলছে নীরব হাহাকার।
কথা হয় চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের আ. রহিমের সাথে। তিনি বলেন, নদীতে মাছ নাই কয়েক মাস ধরে, মোগো মাছ না পাইলে টাকাও আয় না, টাকা না থাকলে ঈদের কথা চিন্তাও করতে পারি না। এহন পর্যন্ত মাইয়া পোলারে নতুন জামা কাপড় দিতে পারি নাই। এহন পর্যন্ত ঈদের সেমাই কিনতে পারি নাই।
সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের লাভলী আক্তার বলেন, সিডরে সাগরে মাছ ধরার সময় নিখোঁজ হয় স্বামী। একমাত্র ৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে এখনো আছি। ছেলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। অনেক কষ্ট করে দিন যাপন করছি। ঈদের আয়োজনের কথা জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মোগো বাড়ি কোন ঈদ হয় না। পাশের বাড়ি দিয়া সেমাই নাস্তা দেয় তা দিয়া ঈদ হয়।
গভীর সাগরে থেকে মাছ শিকার করে আনছার মাঝি বলেন, সাতদিন সাগর ছিলাম। তেমন মাছ পাই নাই, একদিন আগে সাগর থেকে আইছি, ভাগে এক টাকাও পাই নাই। এখন পর্যন্ত ঈদের সেমাই কেনতে পারি নাই।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরই উপকূলের জেলেদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। অনেকের হাতে টাকা নেই, অনেকের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিখোঁজ। এমন অবস্থায় ঈদের আনন্দ তাদের কাছে থাকে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল