মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচার যমুনা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত সনাতন ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী বারুনী স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারুনী স্নানের মাধ্যমে পাপমোচন হয় এই বিশ্বাসকে ধারণ করে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মালম্বী পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে যমুনা নদীর তীরে। ২শ’ বছর ধরে এই বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।
প্রতি বছরের মতো এবারও ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যথাযথ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ এই মহা বারুনী স্নানোৎসবে অংশ নেন। শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি এ উৎসব পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ,বৌদ্ধ কল্যাণ ফ্রন্ট ও শিবালয় সার্বজনীন মন্দির কমিটি সহযোগীতায় অনুষ্ঠিত হয় বারুনী স্নান উৎসব।
প্রতিবছর ৩ দিনব্যাপী এই মেলা হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সাত থেকে দশদিন পর্যন্ত এ মেলা চলতে থাকে। তবে এবার ঈদ উৎসব ও পহেলা বৈশাখের কারণে মেলার দিন আরও বাড়তে পারে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, বাঁশ-কাঠের সামগ্রী, বেত-তালাই পণ্য, মাটির বিভিন্ন সামগ্রী, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যবহার্য্য সামগ্রীর দোকান, মিষ্টি, বিন্নি, খৈই, আখড়া, সাজ, বাতাসাসহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে এই মেলায়।
স্নান করতে আসা অনিল কর্মকার বলেন, আমি ফরিদপুর থেকে এসেছি।
শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রায় দুই’শ থেকে আড়াইশ বছর ধরে এই বারুনী স্নান ও মেলা আরিচায় যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই উৎসব হিন্দু ধর্মালম্বীদের হলেও মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমানদের সোহার্দ্যপূর্ণ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্ত্তী (নারায়ণ ঠাকুর) বলেন, চৈত্রমাসের মধু কৃঞ্চ ত্রয়োদশ তীথিতে এই মহা গঙ্গা-বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট থেকে এই মহা বারুনী গঙ্গা স্নান শুরু হয়ে চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। ভারতের কলকাতা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে পূণ্যার্থীরা আসেন এই মাহা বারুনী গঙ্গা স্নানে।
শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আমাদের শিবালয়ে কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্য এই বারুণী গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এই স্নান হিন্দু ধর্মালম্বীরা উদযাপন করে থাকেন। আমরা শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে থাকি।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ