কারও বাবা নেই, কারও মা নেই, আবার কারও পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে। কখনও রেলস্টেশনে, কখনও বাজে আড্ডায়, কখনও অল্পবয়সে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা। এলোমেলো দিশেহারা এসব পথশিশুদের পড়াশোনা ও জীবনধারণ ছিল অনিশ্চিত। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'অন্বেষণ'।
প্রতিবারের মতো এবছরও এই পথশিশুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে সংগঠনটি। ওই পথশিশুদের নিয়ে একদিনের ইফতার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি দেওয়া হয় ঈদ উপহার। রবিবার (২৩ মার্চ) কুমিল্লার একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় এই আয়োজন করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের সামনে সুন্দরভাবে ইফতার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভালো খাবার দেখে চোখ ছলছল করছে তাদের। ইফতারের পর সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় সেমাই, চিনি, কিসমিসসহ অন্যান্য ঈদ সামগ্রী। এরপর নতুন জামা। নতুন জামা পেয়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় শিশুদের মনে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিফাত জানান, 'প্রথম শ্রেণি থেকে অন্বেষণ পাঠশালায় আসি। আজকে ভালো খাবার দিয়েছে। নতুন জামা ও ঈদের বাজার পেয়েছি।'
এসএসসি পরীক্ষার্থী হামীম জানান, তিনি মডার্ন স্কুলের ছাত্র। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিবে। বাবা ভ্যানগাড়ি চালান, মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। অন্বেষণ না থাকলে তার পড়াশোনা হতো না। পড়াশোনার সব খরচ সংগঠনটি বহন করছে।
সংগঠনটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ মিজান জানান, কুমিল্লা টাউনহলে আমরা কিছু পথশিশুকে পড়ানোর দায়িত্ব নিই। কিন্তু অনেক অভিভাবক তাতে সায় দেন না। অনেক কষ্ট করে তাদের রাজি করাই। এরপর শহরতলির দৌলতপুর রেলগেটে 'অন্বেষণ পাঠশালা' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। ২০১৩ সাল থেকে সেখানে বিনামূল্যে শিশুদের পাঠদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে এই পাঠশালায় ৩৮জন ছাত্রের দেখাশোনা করছি। অনেক ছাত্র মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। পথশিশুদের অনেকে বিভিন্ন স্কুলের ফার্স্ট বয়। ওই শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রতি রমজানে একটু ভালো খাওয়া ও ভালো পোশাক দেওয়ার চেষ্টা করি। এই কাজে সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ আমাদের সঙ্গে শরিক হন।'
বিডি প্রতিদিন/মুসা