কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের সৈকতজুড়ে মাছ শুকাচ্ছেন জেলে শ্রমিকরা। এখানে পোয়া, ফাইস্যা, লইট্যা, চিংড়ি, ছুরিসহ অন্তত ৩০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এসব মাছ জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে ধরে এনে বাঁশের মাচা ও নেটজাল দিয়ে রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বানানো হয় শুঁটকি।
তবে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদ্ধতি ছাড়া তৈরি করা শুঁটকিগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। এই শুঁটকি মহলগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে নারী শ্রমিকরা। তবে ভরা মৌসুমে সাগর থেকে জেলেরা খালি হাতে ফেরার কারণে ভালো নেই। ফলে বেশির ভাগ শুঁটকি মহল খালি পড়ে আছে। তাই শুঁটকি মহলের শ্রমিকরা অভাবে দিনযাপন করছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নের ছোট-বড় প্রায় ৬০০টি শুঁটকি মহল রয়েছে। এতে ১০ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী শ্রমিক। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা নেই। এ ছাড়াও দ্বীপে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মাছ ধরার ছোট-বড় নৌকা রয়েছে। এতে প্রায় ৪৫ হাজার জেলে নিয়মিত সাগরে মাছ শিকারে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার ৯৫৯ জন সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকেন। এদিকে, সাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ছিল। এখন রয়েছে ৩০০ প্রজাতির মাছ। আর ১৭৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত বা স্থান পরিবর্তন করেছে।
শুঁটকি মহলের নারী শ্রমিক রাইতুন আরা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও ২৫০-৩০০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার না চললেও কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি।
আরেক নারী শ্রমিক বেতুয়া খাতুন জানান, ঠিক মতো সাহরি খেতে না পারলেও রোজা ছাড়েননি। নিম্নমানের দু’মুঠো চাল কিনলে, মাছ-তরকারির জন্য টাকা থাকে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) কুতুবদিয়ার আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। লবণাক্ততার আধিক্যের ফলে সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই মিঠা পানির সংকটে মাছগুলো দূরে চলে যাচ্ছে। আবার লবণাক্ত পানির মধ্যে জেলিফিসসহ মাছের পোনা খেকো প্রাণি বৃদ্ধির কারণে জেলেরা সাগরে আগের মতো মাছ পায় না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধিতে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব জানান, বিভিন্ন কারণে সাগরে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে মংস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ বেহুন্দি জাল ব্যবহার করা হয়। এ বেহুন্দি জালগুলোতে পোনা মাছ আটকে পড়ে মারা যায়। ফলে মাছের পোনা মারা যাওয়ায় মাছের উৎপাদন কমে গেছে। এ ছাড়াও উপকূল থেকে ৪০ মিটারের বাইরে মাছ ধরার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আবার সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ শিকার করে। তা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনে সাগরে জেলিফিশ বেড়ে গেছে। ফলে সাগরে মাছের পরিমাণ কমেছে। আবার মানুষের সৃষ্টি দূষণের কারণেও মাছ স্থান পরিবর্তন করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই