চিকিৎসকসহ লোকবল, শয্যা সংকটে সৈয়দপুরে ১০০ শয্যার হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সৈয়দপুরসহ আশপাশের আট উপজেলার লাখ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবায় ভরসা সরকারি এই হাসপাতাল। অথচ নানান সংকটে হাসপাতাল নিজেই যেন রোগী হয়ে পড়েছে, বলছেন সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয়রা। জানা গেছে, সৈয়দপুরে ১৯৬২ সালে স্থাপিত ১৭ শয্যার হাসপাতাল স্বাধীনতার পর ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে সেবা কাযক্রম। এর মধ্যে চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট প্রকট। সচেতন মহলের মতে, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালটি ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশের আটটি উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভরসাস্থল এটি। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ হাসপাতালে চিকিৎসকের ৪০টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১৮ জন। ১১ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদের মধ্যে আছেন মাত্র একজন। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের বিপরীতে কর্মরত পাঁচজন। অন্য আরও ছয়টি পদ শূন্য। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ১৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র তিনজন। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২২০ রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরে চিকিৎসা নেন দৈনিক গড়ে ৯০০ থেকে ১২০০ রোগী। এর মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। হাসপাতালে এক্স-রে ও প্যাথলজি টেস্টের সুবিধা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এসব সেবায় বিঘ্ন ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে আউটডোরে সেবা নিতে নাফিজা বেগম বলেন, ‘সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেলাম ১০টায়। আর সেই টিকিট নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখালাম দুপুর ১২টায়। ডাক্তার একজন। অনেকেই চিকিৎসা না নিয়ে চলেও গেছে। নামেই ১০০ শয্যার হাসপাতাল।’ চিকিৎসা নিতে আসা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বলেন, হাসপাতালটি ভৌগোলিকভাবে এমন জায়গায় অবস্থিত যে আশপাশের দিনাজপুরের বেনিরহাট, চিরিরবন্দর, পারবর্তীপুর, খানসামা, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জসহ সাতটি উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের সেবার ভরসাস্থল এটি। এজন্য হাসপাতালটিকে কমপক্ষে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।