ভূমি অধিগ্রহণে থমকে আছে নওগাঁ-বদলগাছী আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ। তিন বছরেও শেষ হয়নি ১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ। অভিযোগ ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার চিঠি দেওয়ায় জটিলতা তৈরি হলে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে জায়গা বুঝে না পেয়ে কাজ রেখে চলে গেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ফলে কিছু কিছু জায়গায় কাজ অসম্পন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। এদিকে কাজের ধীর গতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। আর এত দিনেও টাকা না পেয়ে হতাশ ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তরা।
নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়ক বিভাগ ১৯টি প্যাকেজে জেলার বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ করছে। এর মধ্যে এক নম্বর প্যাকেজে শহরের বালুডাঙ্গা বরুকান্দি মোড় থেকে কীর্ত্তিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফিট থেকে ২৪ ফিট (চওড়া) প্রশস্তকরণ কাজের প্রকল্প নেওয়া হয়। যার ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পান মেসার্স জামিল ইকবাল লিমিটেড নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রশস্তকরণের এ কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় সড়কের পাশে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও স্থাপনা পড়ে। এসব জমি ও স্থাপনার একটা নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করে অধিগ্রহণ করা হয় এবং প্রায় আট মাস আগেই ক্ষতিপূরণের ৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আবদুল মামুন, আবদুল মান্নান, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও জিল্লুর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বলেন, কাজ শুরুর তিন বছর পার হলেও জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো তারা বুঝে পাননি। শহরের বরুনকান্দি ঠেংভাঙার মোড় থেকে কীর্ত্তিপুর পর্যন্ত প্রায় ৬৮০ জনের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬২ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু স্থাপনার মূল্য থেকে ১০ শতাংশ টাকা কেটে নিতে নওগাঁ সড়ক বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপর এ চিঠির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা প্রশাসন। আবার ক্ষতিগ্রস্তরা এ টাকা দিতে রাজি নন। শুরু হয় জটিলতা। এ জটিলতায় আর কাউকেই দেওয়া হয়নি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ এলাকায় সড়কের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিসি অফিসের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা জমি হস্তান্তর না করার কারণে সড়কের কিছু কিছু জায়গায় কাজ করা হয়নি। জমি হস্তান্তর করা হলে খুব দ্রুত অসমাপ্ত সড়কের কাজ শেষ করা যাবে। ১০ শতাংশ চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থাপনার নিলামের ঝামেলা এড়াতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি জানেন না কতগুলো চেক দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বলেন, সড়ক বিভাগ থেকে দেওয়া একটা চিঠির বিষয়ে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে মালিকদের অনেক ঝামেলা আছে। কেউ কেউ অভিযোগ দিয়েছে, এমনকি আদালতে মামলা করেছে। তার পরও জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১০ শতাংশ জটিলতার অবসান করা হয়েছে। অন্যান্য জটিলতা থাকলেও আংশিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।