হাতুড়ি পেটার ঠুকঠাক আর ভাঁতির ফাসফুস, টুং-টাং শব্দে মুখর এখন কামারশালাগুলো। তবে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়লেও কামারপল্লির শিল্পীরা ভালো নেই। সময় আর প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে তাদের সব খুশি। মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি সরঞ্জামের চাহিদা দিন দিন কমছে। এর পরেও আশায় বুক বেঁধে দা-কুড়াল তৈরি এবং পুরোনোগুলো ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের কামাররা। কিন্তু সংশয় যেন কাটছে না তাদের। বেচাকেনা আগের তুলনায় কমেছে। তারা বলছেন- কোরবানি পশুর মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে চাপাতি, দা, ছুরি, বঁটিসহ কিছু ধারালো জিনিস ব্যবহার হয়। অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আর যারা আঁকড়ে ধরে আছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গতকাল পাকেরহাট ও কাচিনীয়া বাজারে দেখা যায়, কামারপাড়াগুলো টুংটাং শব্দে মুখর। কয়লার আগুনে লোহা পেটাতে পেটাতে ঘাম ঝরছে শ্রমিকদের। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও বিরাম নেই তাদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, ছুরি, চাপাতি ও বঁটি তৈরির কাজ। পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতেও আসছেন অনেকে।
স্থানীয় কামাররা জানান, সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্প্রিং (পাকা) লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি সরঞ্জাম টেকসই, দামও বেশি। কাঁচা লোহার তৈরিগুলো অপেক্ষাকৃত সস্তা, মানে কিছুটা কম। এঙ্গেল, রড, ব্লক বার ও গাড়ির পাত ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। লোহার দাম প্রতি কেজি ৭৫-৯০ টাকা এবং স্প্রিং লোহা ১০২-১২০ টাকা। কয়লা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২২-২৫ টাকায়। উপকরণ ও মজুরি বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে। প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০, বড় ছুরি ৩৫০-৬০০, ছোট ছুরি ১০০-২০০, কুড়াল ৯০০-১৫০০, চাপ দা ১৫০-২০০, বঁটি ৬০-২০০ এবং চামড়া ছড়ানোর ছুরি ২০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাকেরহাট বাজারের কামার জগদীশ রায় বলেন, বছরের অন্য সময় কাজের চাপ কম থাকে। কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকে না। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত, তাহলে অনেকের উন্নতি হতো।
পাকেরহাট বেলতলী মার্কেটের কামার সাঞ্জু রায় বলেন, লোহা, কয়লার দাম, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। তাই যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে। তবে দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবছর দাম বেড়েই চলেছে। বালাপাড়া গ্রামের সাব্বির হোসেন ও লিটন ইসলাম, ছাতিয়ানগড়ের নাসির ইসলামসহ অনেকে পুরোনো সরঞ্জাম শান দিতে এসেছেন পাকেরহাট বাজারে। তাঁরা বলেন, কোরবানির ঈদে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য এসব যন্ত্রপাতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নতুন কেনা ও পুরোনো শান দেওয়া দুটিই করতে হয়।