ভক্ত-অনুরাগীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষবিদায় দিলেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিককে। ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় গতকাল বেলা ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধানিবেদনের জন্য বারডেম থেকে আহমদ রফিকের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খানের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধানিবেদন পর্ব শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, ছাত্র-যুব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শ্রদ্ধানিবেদনকালে ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তিনি একাধারে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। আর রবীন্দ্রগবেষক হিসেবে তাঁর কাজ উভয় বাংলায় অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে। আজীবন তাঁর কাজ ও রাজনৈতিক ভাবনা ছিল সমাজের রূপান্তরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাঁর প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের সংগ্রামের তিনি প্রেরণা হয়ে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।’ প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, ‘আহমদ রফিক আজীবন ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য লড়েছেন। দেশভাগ তাঁকে ব্যথিত করেছিল, তাই আজন্ম সম্প্রীতির সমাজ গড়ার সাধনা করে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে তাঁর কাজ রবীন্দ্রচর্চায় অনন্য মাত্রা দিয়েছে।’ অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ‘সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানায় তাঁর বিশ্বাস ছিল না। ব্যক্তিগত সম্পত্তি যা ছিল, তা বিক্রি করে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিপর্যায়ে অনেককে দান করেছেন। নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবেননি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে জীবনের শেষ দিনগুলো তাঁর ভালো কাটেনি। এখন সম্পদ বলতে রয়েছে তাঁর রচিত গ্রন্থ। তাঁর এ সম্পদ সমাজকে আলোকিত করেছে। এগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।’
আরও শ্রদ্ধানিবেদন : ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কপিরাইটস অফিস, জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, লেখক শিবির, একুশের চেতনা পরিষদ, ছায়ানট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্রগতি লেখক সংঘ, বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ, খেলাঘর কেন্দ্রীয় সংসদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, জাতিসংঘ সমিতি, ডাকসু, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ মার্কসবাদী, শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ঐক্য ন্যাপ, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর, আলঝেইমার্স, পারকিনসনস, ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স, বেডশোর, ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন।