দিনাজপুরে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগ। মশা-মাছিবাহিত এ রোগে ইতোমধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়েছে শত শত গরু। গত এক মাসে ফুলবাড়ীতে অনেক গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিসহ প্রান্তিক চাষিরা। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান জানান, এ রোগ ছোট আকারের গরু-মহিষে বেশি দেখা দেয়। ফলে আসন্ন কোরবানির হাটে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। জানা যায়, লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত চর্মরোগ, যা গরু-মহিষকে আক্রান্ত করে। বছরে অন্তত দুবার এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে। এক পর্যায়ে লোম উঠে যায়। ক্ষত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পা ফুলে যায়, শরীরে তাপমাত্রা বাড়ে। নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। বন্ধ হয়ে যায় খাওয়া। বেশি আক্রান্ত হলে ছটফট করতে করতে গরু মারা যায়। সঠিক চিকিৎসায় গরু ভালো হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফুলবাড়ীর শিবনগর গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন রয়েল বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে এ গ্রামেই এখন পর্যন্ত ৭-৮টি গরু মারা গেছে। বিশেষ করে ছোট গরু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভ্যাকসিন সরকারিভাবে আমদানি করলে এবং গরুর জন্য সিঙ্গেল ডোজের ভায়েল বাজারে এলে খামারিরা উপকৃত হবেন। পুরাতন বন্দর এলাকার রুবিনা খাতুন বলেন, আমার পাশের বাড়িতে বাছুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমার গরুকে ভ্যাকসিন দিতে চাইছিলাম। একেকটি ভ্যাকসিনের দাম ২৭০০-৩০০০ টাকা-তাই দিতে পারিনি। আমার দুটি গরু লাম্পিতে আক্রান্ত হয়েছে।
শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান ছামেদুল ইসলাম বলেন, লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে এ এলাকায় ১৫-১৬টি গরু মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাইনি। রোগ প্রতিরোধে প্রতিটি এলাকায় ক্যাম্প করা হবে শুনেছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান বলেন, এ রোগের বিষয়ে সচেতনতার জন্য গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। একটি ভায়েলে ১০টি গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়, দাম ২৭০০ টাকা। সরকারিভাবে আমদানি করে টিকা সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করলে খামারিরা উপকৃত হবেন।
তিনি আরও বলেন, লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত মৌসুমি চর্মরোগ, যা মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। কোনো গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে পৃথক করে মশারির নিচে রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুকে কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। এবার রোগটি নির্মূলে আগে থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। রোগটি সাধারণত এপ্রিল মাসে বেশি হয়। তখন কিছু পশু মারা যেতে পারে। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ রোগের প্রবণতা কমে গেছে।