গাইবান্ধায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় নদ-নদী, খাল-বিলে, পুকুর ও ডোবায় পানি নেই। ফলে এবার পাটের ভালো ফলন হলেও জাঁক দেওয়া যাচ্ছে না। পানি অভাবে সোনালি আঁশ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। এসব এলাকায় ক্ষেতেই পাট ফেলে রেখেছেন তারা। অনাবৃষ্টির কারণে চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষিদের চরম ভোগান্তি ও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারলে আঁশের মানও এবার নিম্নমুখীর শঙ্কায় কৃষকরা।
সরজেমিনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহদুয়েক ধরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ওপর দিয়ে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তা কোন কাজে আসছে না। এতে করে এলাকায় আমন চাষাবাদ অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া যেসব কৃষকের বীজতলায় চারার বয়স হয়ে গেছে, তারা সেচের মাধ্যেমে আমনচারা রোপণ শুরু করেছেন। চাষাবাদ খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে নিচু জলাশয় সমূহে পানি না থাকায় তোষাপাট চাষীরা পাট জাঁক দিতে পারছেন না।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার পনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টরজমিতে তোষাপাট চাষাবাদ হয়েছে। সেই সাথে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৮৫ হেক্টর। বৈরি আবহাওয়ার এ অবস্থায় চলতে থাকলে চাষাবাদ ব্যাহত হতে পারে।
কৃষকরা জানান, বাড়ির আশপাশ নিচু জলাশয়, পুকুর, ডোবা, নালায় নেই পানি। সে কারণে তোষাপাট পঁচানোর জন্য জাঁক দেয়া সম্ভাব হচ্ছেনা। গত ১০দিন ধরে ক্ষেতে পড়ে আছে তোষাপাট। রোদে পুড়ে যাচ্ছে তোষাপাটের আটিগুলো। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনালি আঁশ, যেন গলার ফাঁস হয়ে যাবে। সেচ মোটর বা শ্যালোমেশিন দিয়ে জলাশয়ে পানি ভরে করে তোষাপাট জাঁক দিয়ে কোন লাভ হচ্ছে না, যদি ভারী বৃষ্টি না হয়।
উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের বজড়াকঞ্চিবাড়ি এলাকার পাটচাষী আব্দুল মতিন মিয়া। তিনি চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে তোষাপাট চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে একবিঘা জমির তোষাপাট কেট ফেলেছেন। কিন্তু পানির অভাবে জাঁক দিতে পারছেন না।
একই কথা বললেন, চন্ডিপুর ইউনিয়নের নুরুল মিয়া, চৌমাথা এলাকার নাহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান। তারা বলেন, কম পানিতে তোষাপাট জাঁক দিলে পাটের রং ভাল হবে না। বাজার দর অনেক কম হবে। এসব কারণে পাট চাষিদের লোকসান গুনতে হবে।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির বলেন, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে আসলে মানুষের কোন হাত নেই। তবে অনেকে সেচের মাধ্যমে পুকুর, ডোবা, নালা এবং নিচু জলাশয়ে পানি ভরে করে তোষা পাট জাঁক দিচ্ছে। সেই সাথে অনেক কৃষক সেচের মাধ্যমে আমন চারা রোপণ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, কম পানিতে তোষা পাটের রং একটু খারাপ হতে পারে। এতে কোন প্রভাব পড়বে না। আমন ধান চাষাবাদের সময় এখনো পার হয়নি। আরও ১০ হতে ১৫দিন পরে চারা রোপণ করলে কোন ক্ষতি হবে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল