ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ও খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মারওয়ান আল-সুলতান। ঘটনাটি দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ইন্দোনেশীয় সংসদ সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর আরব নিউজের।
ডা. মারওয়ান ফিলিস্তিনের উত্তর গাজায় ইন্দোনেশিয়া পরিচালিত হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে পাকিস্তানের হায়দরাবাদের লিয়াকত মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
গত বুধবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় তার অস্থায়ী বাসস্থানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনি, তার স্ত্রী ও সন্তানরা নিহত হন। বেঁচে যাওয়া কন্যা লুবনা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি সোজা তার কক্ষেই আঘাত হানে, যেখানে তিনি ছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল ইমার্জেন্সি রেসকিউ কমিটি (MER-C) এই হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছে।
বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া হাসপাতাল গাজার অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র। ২০১৫ সালের শেষ দিকে ইন্দোনেশীয় জনগণের দান ও স্বেচ্ছাশ্রমে MER-C-এর তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি নির্মিত হয়। এর অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয় ইন্দোনেশিয়া থেকেই।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের বর্বর হামলা শুরু হলে এ হাসপাতালই প্রথম হামলার শিকার হয়। তবুও ডা. মারওয়ান সেখানেই থেকে গাজাবাসীর চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যান। হামলার মধ্যেও তিনি হাসপাতালে জরুরি সংস্কার কাজ তদারকি করেন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি ঘেরাও চলাকালে রোগীদের নিরাপদে সরিয়ে নেন।
ডা. মারওয়ানের মৃত্যুতে ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় পর্যায়ে শোক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সরকার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির সংসদের আন্তঃপার্লামেন্টারি সহযোগিতা কমিটি বিশ্ব সংসদগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী এসব অপরাধ যেন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা হয় এবং ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৬,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। তবে আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, প্রকৃত মৃত্যু ও হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় ৪১ শতাংশ মৃত্যু তথ্যগতভাবে অনুল্লিখিত থেকে গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ