বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা, নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে একটি টকশোতে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা নিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রস্তাবনার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, যে ব্যক্তি সাত বা নয় বছরে স্বৈরাচার হননি, তিনি ১১ বছরে হঠাৎ করে স্বৈরাচার হবেন—এই যুক্তি টেকে না।
তিনি ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই ব্যবস্থায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়, সেই দলের সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেন কে হবেন প্রধানমন্ত্রী। এটা প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেম নয়, যে নির্দিষ্ট মেয়াদের সীমা থাকতে হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি তার সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং দেশসেবায় প্রশ্নাতীত হন, কেবল তাহলে তাকে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে আটকানোটা যুক্তিসঙ্গত।
টকশোতে রুমিন ফারহানা বলেন, এনসিপি গঠন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো আসলে বিএনপিকে ঠেকাতে ও নির্বাচন পেছাতে নেওয়া কৌশলের অংশ। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক শয়তানি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য হঠাৎ এতগুলো দল দৌড়াচ্ছে, এটা উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়।
ভুঁইফোড় দল তৈরি করে সরকার চায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিত্র তুলে ধরতে, যদিও বাস্তবে তারা কোনো জনপ্রতিনিধিত্ব করে না।
ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে ভোটাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকতে হবে। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে জনপ্রতিনিধি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু বিগত কয়েকটি নির্বাচন তার ছিটেফোঁটাও মানেনি।
তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কোনো ব্যক্তি, যিনি জনপ্রিয় নন, তিনিও ক্ষমতায় থেকে যেতে পারেন—এটাই স্বৈরাচারের পথ খুলে দেয়। তাই কাগজে-কলমে কিছু না লিখলেও মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করে রুমিন বলেন, আমাদের অবস্থান হলো পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে গ্যাপ দিয়ে পরে আবার ক্ষমতায় আসা যেতে পারে। এটা জনগণ যদি পছন্দ করে, তারা ভোট দেবে; না করলে দেবে না। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি কোনো দলের মত বা প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে না, যত ছোট দলই হোক না কেন। ন্যায্য দাবি হলে সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই দেখে। বিএনপি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক দল—শুধু মুখে নয়, আচরণেও।
আনুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে রুমিন বলেন, হঠাৎ করে বাংলাদেশে আনুপাতিক পদ্ধতি আনা কেন? এটা একটা রাজনৈতিক ফাঁদ। জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য দল বুঝতে পারছে যে আসনভিত্তিক নির্বাচনে তারা সফল হবে না, তাই তারা ভোটের আনুপাতিক হিসেবকে ব্যবহার করতে চায় জনপ্রিয়তা দেখানোর কৌশল হিসেবে।
সবশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যদি চায়, তারা যেকোনো সরকারকে রাখতে পারবে, আবার চাইলে বিদায়ও করতে পারবে—এই শক্তিটাই গণতন্ত্রের মূল।
এসব বিষয়ে এমএ আজিজ বলেন, এখন আমরা মাথার ভেতরে যদি রাখি যে, সংস্কার কমিশনের যিনি প্রধান তিনি আমেরিকান সিটিজেন; এইজন্য যদি আমেরিকান আদলে চিন্তা করে তাহলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। আমার বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশের আদলে এটা দেখতে হবে। এখানে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা দরকার।
তিনি বলেন, নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ করেন, ক্ষমতা হস্তান্তর নিরপেক্ষ করেন এবং এখানে যদি ক্ষমতার ব্যালেন্সটা করে দেন তাহলে তো আপনার প্রত্যাশা পূরণ হয়। ড. মোহাম্মদ ইউনূস প্রথমে বলেছিলেন, যতটুকু রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারে একমত হয়, ততটুক নিয়ে নির্বাচনে যাবেন। তিনি বলেছিলেন, ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব কে কোন সংস্কারে হ্যাঁ বলেছেন, কোথায় না করেছে; জনগণ সেটা বিচার করবে। আপনার কথা হচ্ছে জনগণ যতক্ষণ পর্যন্ত নিরপেক্ষভাবে ভোট দেওয়ার মতো ক্ষেত্র তৈরি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার বদল হওয়ার চান্সও কমে যাবে। এখানে কাউকে ঠেকানোর ক্ষমতা নাই। পার্টি বড় হলে সে ইলেকশনে জিতবেই, এটা ঠেকানোর কোনো টার্গেট নিয়ে এনসিপি সবকিছুতে বাগড়া দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জামায়াতের প্রথম দাবি ছিল। যতগুলো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে, এই নির্বাচনগুলো বিতর্কিত কম হয়েছে। তবে সবকিছুতে ঐক্যমত হবে না। কারণ, বিএনপির পলিটিক্স, জামায়াতের পলিটিক্স এক নয়। জামাতের পলিটিক্স, বামপন্থিদের পলিটিক্স এক নয়। তাহলে আপনি এক করতে চান কেন? যার যার নীতি আদর্শ আলাদা। তাহলে সবকিছুতে যদি একমত হয় তাহলে তো দেশে বহু দল থাকবে না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন