মন্টজুইক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে এল ক্লাসিকো মানেই নাটক, আর এবার সেই নাটক ছাপিয়ে গেল রোমাঞ্চের সব সীমা! লা লিগায় দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হারিয়ে জয় তুলে নিয়েছে বার্সেলোনা। রবিবার রাতে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ তিন ম্যাচে কেবল একটি জয় প্রয়োজন তাদের। চমৎকার হ্যাটট্রিকেও মৌসুমে বার্সেলোনার বিপক্ষে রেয়ালের চতুর্থ হার এড়াতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপে। বার্সেলোনার হয়ে জোড়া গোল করেন রাফিনিয়া। লামিনে ইয়ামাল ও এরিক গার্সিয়া করেন একটি করে গোল। শুরুতে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর প্রথমার্ধেই গোল চারটি করে তারা। ৩৫ ম্যাচে ২৬ জয় ও চার ড্রয়ে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও সংহত করল বার্সেলোনা। তিন রাউন্ড বাকি থাকতে তাদের চেয়ে ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ায় রেয়ালের শিরোপা ধরে রাখার পথ বহুগুণ কঠিন হয়ে গেল।
ম্যাচ হারলেও এদিনের শুরুটা ছিল একেবারেই রিয়াল মাদ্রিদের। ঘরের মাঠে বার্সেলোনাকে যতটা জোর ধাক্কা দেয়া সম্ভব ছিল, সেটাই দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যেই কিলিয়ান এমবাপ্পে বার্সেলোনার রক্ষণ ভেদ করে জোড়া গোল করে এগিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদকে। প্রথমে পেনাল্টি থেকে এবং পরে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পাসে গোল করে দর্শকদের মনে সৃষ্টি করেন একরাশ হতাশা। কিন্তু কাতালানরা কি এত সহজে হার মানে?
১৯তম মিনিটে ফেরান তোরেসের কর্নার থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান কমান এরিক গার্সিয়া। এরপর ১৭ বছরের বিস্ময় বালক লামিন ইয়ামালের তালা। ৩২ মিনিটে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত কার্লিং শটে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি। ম্যাচ তখন জমে ওঠে, আর তার দুই মিনিট পরেই রাফিনিয়ার গোল—চাপের মুখে ভুল করা লুকাস ভাসকেজের কাছ থেকে বল কাড়িয়ে এগিয়ে দেন বার্সেলোনাকে।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই ফেরান তোরেসের পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রাফিনহা। বিরতিতে যাওয়ার সময় স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-২, বার্সা সমর্থকদের মুখে তখন শুধুই উল্লাস! দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরও একটি গোল পেতে পারতেন ইয়ামাল, কিন্তু রাফিনিয়ার অফসাইডে সেই গোল বাতিল হয়। এরপর আবারও দৃশ্যপটে এমবাপ্পে—৭০ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ফরাসি মহাতারকা। এই গোলের মাধ্যমে নিজের প্রথম মৌসুমেই রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি।
শেষদিকে ফেরমিন লোপেজ একবার বল জালে পাঠালেও ভিএআর সেই গোল বাতিল করে দেয় হ্যান্ডবলের কারণে। রাফিনহাও মিস করেন নিশ্চিত একটি সুযোগ, কিন্তু ততক্ষণে রিয়ালকে আর ম্যাচে ফেরার পথ দেয়নি বার্সা।
এক নজরে এল ক্লাসিকোর কিছু রেকর্ড, এই নিয়ে টানা চারটি এল ক্লাসিকো জিতলো বার্সেলোনা—১৯৮২-৮৩ মৌসুমের পর যা প্রথম। রিয়াল মাদ্রিদ এবার ক্লাসিকোতে বার্সার কাছে মোট ১৬টি গোল হজম করেছে। এই জয়ে বার্সা শীর্ষে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে গেল এবং আর মাত্র এক জয় দূরে তাদের ২৮তম লা লিগা শিরোপা।
আগামী বৃহস্পতিবার এস্পানিওলের বিপক্ষে জয় পেলেই বার্সেলোনা নিশ্চিত করবে তাদের লিগ শিরোপা। অন্যদিকে, বুধবার যদি রিয়াল মাদ্রিদ হেরে যায় মায়োর্কার বিপক্ষে, তাহলে ঘরে বসেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বার্সা।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম