আন্তর্জাতিকমানের বগুড়া শহীদ চাঁন্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বৈষম্য আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নান্দনিক ও নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামে গত ১৯ বছরেও কোন আন্তর্জাতিকমানের ম্যাচ গড়ায়নি। স্থানীয় ক্রিকেটাররা খেলা চালিয়ে গেলেও বিসিবির সঠিক সংস্কার আর যত্নের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বগুড়ার এই ক্রিকেট মাঠটি।
বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জাতীয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিমদের জন্মভূমিতে আবারো আন্তর্জাতিক ম্যাচের চার ছক্কার বাউন্ডারি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো দর্শক। স্টেডিয়ামটি অবহেলায় পরে থাকার পর এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের বল গড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন উত্তরের ক্রিকেটপ্রেমিরা।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে নির্মিত স্টেডিয়ামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু হয়। ওই সময় ফুটবল, ক্রিকেটসহ স্থানীয় বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান হতো এই স্টেডিয়ামে। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর ২০০৩ সালের ৩ জুন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া শহীদ চাঁন্দু ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। অনুর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বগুড়ার এই স্টেডিয়ামের। আইসিসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি মাত্র টেস্ট ম্যাচ আর ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।২০০৬ সালে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ায়। এরপর টানা ১৯ বছর বগুড়ায় বসেনি কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।
ম্যাচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ বিল রয়েছে বকেয়া, স্টাফ বেতন পরিশোধ থাকলেও, আউটফিল্ড, পিচ, ইনডোর, গ্যালারী, মিডিয়া বক্স, স্কোরবোর্ড, জিমনেসিয়াম এখন প্রায় অকেজো।
বগুড়ার ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দ্বিতীয় সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর হাতে গড়া বগুড়ার শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম গত ১৯ বছর ছিলো অবেহলিত। বগুড়ার স্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। বৈষম্যের ফাঁদে পড়ে বগুড়ার সবুজ ও নান্দনিক ভাবে সাজানো মাঠটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই মাঠের উইকেট অত্যান্ত ভালোমানের হয়ার পরেও বিসিবির নেতৃবৃন্দ মাঠটি সরে নিয়ে যায়। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের আইসিসির স্বীকৃতি তুলে নেওয়ার আগেই সিলেটে নির্মাণ করা হয় একটি স্টেডিয়াম। ওই সময় বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তারা প্রতিহিংসাবশত বগুড়ার মাঠ থেকে বিএনপির নামটি মুছে দিতেই এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ করেন। ম্যাচ না থাকায় সংস্কারসহ অবকাঠামোর কোন উন্নয়নও করা হয়নি।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য মোস্তফা মোঘল জানান, বগুড়ার এই স্টেডিয়াম থেকেই উঠে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, শফিউল ইসলাম সুহাস, রয়েছে বেশ কয়েকজন নারী ক্রিকেটার। সকলেই সুনামের সাথে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বগুড়া থেকে জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্যা ক্রিকেটার, ফুটবলার ও অন্যান্য খেলোয়াড় তৈরি করা হয়। অথচ সেই বগুড়াকে জাতীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছিলো অবহেলিত করে। বগুড়ার এই স্টেডিয়ামটি নষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় থাকা এই স্টেডিয়ামের সংস্কারের হিসাব অর্থ নেই।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, বগুড়ার এক ঝাঁক ক্রিকেটার আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়িত্বশীলতার সাথে খেলে জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। ঢাকার বাহিরে যে সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে তার মধ্যে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম উল্লেখযোগ্য। বগুড়ার আবাসন ব্যবস্থা এখন অন্য জেলার চেয়ে অনেক উন্নত। বগুড়ায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিকমানের হোটেল মোটেল চালু রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্টেডিয়ামের চাইতে বগুড়ার স্টেডিয়ামের যোগাযোগসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশি রয়েছে। তারপরেও বগুড়ার এই স্টেডিয়ামকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এই বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক কমিটির সদস্য খালেদ মাহমুদ রুবেল জানান, আহবায়ক কমিটির সভাপতি বগুড়ার জেলা প্রশাসক, সদস্য মোস্তফা মোঘলসহ সকল সদস্যই চেষ্টা করছেন বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ফিরিয়ে আনতে। আমাদের বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। সেগুলো জানানো হয়েছে। বর্তমানে এই মাঠের কোন কিছুই ঠিক নেই। নতুন করে সংস্কার করে নিতে হবে। বিগত সময়ে বৈষম্য আর রাজনৈতিক কারণে এই মাঠটিকে মুলত হত্যা করা হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল