শ্রম খাতে নানা সংস্কারের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রায় সাড়ে চার শ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রতিবেদনে সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে শ্রেণি ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তুই-তুমি সম্বোধন বন্ধ করা, মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠন, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, শ্রমিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও অযথা হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে কমিশন। শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে গত বছরের নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে আট কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে সাত কোটিরই কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। কমিশন সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছেন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, স্বনিয়োজিতসহ সব শ্রমিকের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা, শ্রমিক আন্দোলনের সময় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিল করে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার বিস্তৃত করা ও দর কষাকষির অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতা বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন, সংকটকালীন সময়েও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখতে আপদকালীন তহবিল গঠন, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী ব্যবহার, কর্মপরিবেশে তুই-তুমি সম্বোধন চর্চা বন্ধ করা, শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগ পর্যন্ত সবক্ষেত্রে বাংলা প্রচলন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষ সবার অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন কমিশন। এ ছাড়া শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সব শ্রমিকের সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধ করা, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে রাষ্ট্র কর্তৃক শহীদের স্বীকৃতি প্রদান, শ্রম সংক্রান্ত গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার কর্তৃক আলাদা বিভাগ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।