২০০২ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান চ্যাম্পিয়নের পর তাদের লিগ জেতাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। চার ক্লাব একাধিকবার ট্রফি জিতলেও পেশাদার লিগে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি কোনোভাবেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারছিল না। সেই মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয় আলফাজের প্রশিক্ষণে। মাঝারি মানের দল নিয়েও দুর্দান্ত খেলেছিল সাদা-কালোরা। পরিকল্পনা করে খেলালে ফল যে সুখকর হয় তা আলফাজের প্রশিক্ষণে প্রমাণ মেলেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবে তার হাতে উঠেছে সেরা কোচের পুরস্কার। চ্যাম্পিয়ন হলে যখন দেশসেরা হয়। তেমনি লিগের সেরা কোচকেও তাহলে দেশসেরা বলা যেতেই পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে আলফাজ ঘিরে এত আলোচনারই দরকার কী? এর আগে স্থানীয় কোচরাই দলকে একাধিকবার লিগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। আর সবাই ছিলেন তারকা ফুটবলার। আশরাফের প্রশিক্ষণে মোহামেডান তিনবার, গোলাম সারোয়ার টিপুর প্রশিক্ষণে দুবার, শফিকুল ইসলাম মানিক আবার মোহামেডান-আবাহনীর দাপটের মুখে মুক্তিযোদ্ধাকে দুবার চ্যাম্পিয়ন করাতে সক্ষম হয়েছেন। চুক্তিবদ্ধ কোচ না হলেও পেশাদার লিগে আবাহনীর হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের পেছনে অমলেশ সেনের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হবে। জনপ্রিয় এ দলটি যখনই কোচ নিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন অমলেশই দায়িত্ব নিয়ে সাফল্য এনে দিয়েছেন।
আলী ইমাম কোচ হিসেবে কতটা স্বার্থক ছিলেন তার প্রমাণ দিয়েছেন আবাহনী ও মোহামেডান বড় দুই দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে। যে ব্রাদার্স ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন হতে পারছিল না ওয়াজেদ গাজীর প্রশিক্ষণেই লিগে সাফল্যের মুখ দেখেছে গোপীবাগের দলটি। মারুফুল হকও তো ক্যারিশম্যার পরিচয় দিয়েছেন। তার প্রশিক্ষণেই শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ট্রেবল জিতেছিল। আবদুর রহিম, আবদুস সাদেক বা বজলুর রশিদের কোচিংয়েও চমক ছিল। ১৯৭৭ সালে আবাহনী প্রথম অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবদুস সাদেকের প্রশিক্ষণে। রহিমের প্রশিক্ষণেও আবাহনী দুবার লিগ জিতেছে। কাজী সালাউদ্দিন তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন আবাহনীকে লিগ জিতিয়ে। কোচ সাহেব আলীর কথা কি ভোলা যায়? স্বাধীনতার পর লিগে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় বিজেআইসি। সেই দলের কোচ ছিলেন সাহেব আলী।
পেশাদার লিগ শুরুর পরই ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি কোচের হিড়িক পড়ে যায়। এমন অবস্থায় যেন স্থানীয় কোচ চলেই না। জাতীয় দলে কোচের পদটি বিদেশিদের জন্য স্থায়ী হয়ে গেছে। দেশি কোচের নামই বাফুফে কর্মকর্তাদের মুখে উচ্চারিত হয় না। তুচ্ছতাচ্ছিল্যতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কর্মকর্তাদের ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে, কোচের কাজটি দেশের কাউকে দিয়ে মানায় না। তা না হলে যেখানে বিদেশি কোচ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। সেখানে স্থানীয়দের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিদেশিরা দায়িত্ব পেলে যদি খারাপই করে, তাহলে তাদের দায়িত্বে রেখেই বা লাভ কি? তারা তো উন্নয়নই ঘটাতে পারছে না।
আলফাজ সেরা কোচ হয়েছেন বলে একেবারে বিখ্যাত হয়ে গেলেন তাও না। তিনি তো বিদেশিদের ভিড়ে দেখাতে পেরেছেন দেশিদের প্রশিক্ষণেও দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। তারপরও তারা বৈষম্যের শিকার। ঘরোয়া ফুটবলে খেলোয়াড়রা যেমন বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। তেমনি বিদেশি কোচদেরও বেতন হয় সম্মানজনক। সেখানে স্থানীয় কোচরা কত পান? আলফাজ তো মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করালেন। তিনি কত টাকা পেয়েছিলেন? পুরো অর্থ এখনো বুঝে পেয়েছেন কি? একজন সেরা কোচের বেলায় যদি এ অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে অন্য দেশিদের কী হবে। লিগ রানার্সআপ আবাহনীর মারুফুল হক কত টাকা পেয়েছিলেন? আসলে ফুটবলে সব কিছু বাড়লেও বাড়ে না শুধু স্থানীয় কোচদের পারিশ্রমিক। সব সময় তারা বঞ্চনার শিকার। এজন্য সেভাবে নতুন কোচের দেখা মিলছে না। এ যে ফুটবলের জন্য কতটা অশনিসংকেত তা কি কর্মকর্তারা বোঝেন? আলোচনা হয়েছে শুধু চ্যাম্পিয়ন কোচদের নিয়ে। কামাল বাবু তো কখনো কোনো দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি। তার প্রশিক্ষণে তো অনেক খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলেছে। যারা এখন রীতিমতো মাঠ কাঁপাচ্ছেন। দেশের কোচই যদি না থাকে তাহলে তো ফুটবলের পাইপ লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন অবস্থাটা কী হবে?