পাহাড়রাজ্য মেঘালয়। বাংলাদেশের সীমানা থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে। পাহাড়ি রাজ্যের রাজধানী শিলং; ভূমি থেকে ১ হাজার ৫০০ মিটার উঁচুতে। আবহাওয়া শীতল। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। স্থানীয়রা যাকে ডাকে পোলো গ্রাউন্ড বলে। এ মাঠেই ২৫ মার্চ, মঙ্গলবার বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হবে হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি ঘিরে যতটা উত্তেজনা, তার চেয়েও শতগুণ বেশি উন্মাদনা হামজাকে ঘিরে। দুই দেশের ফুটবল অঙ্গনেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। হামজাকে পেয়ে যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। এখন সবার নজর জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরীদের দিকে। সবার চোখ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দিকে।
দুই প্রতিবেশীর ম্যাচের সব ফোকাস এখন ইংলিশ বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজার দিকে। ভারতীয়রা ছক কষছেন হামজাকে ঘিরে। বাংলাদেশের কোচ হাবিয়ের কাবরেরা ছক কষছেন ৪০ বছরের সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে। যিনি অবসর ভেঙে ফিরেছেন জাতীয় দলে। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে হামজার অভিষেক হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হামজাকে কোন পজিশনে খেলাবেন কোচ কাবরেরা? বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘হামজা এক্সট্রা অর্ডিনারি ফুটবলার। তাকে কোন পজিশনে খেলানো উচিত, সেটা কোচিং স্টাফ ঠিক করবেন। আমার মত হচ্ছে, সে যে পজিশনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, সেখানেই খেলানো উচিত। আবার চাইলে তাকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলাতে পারেন। ভারতীয় দলের সব পরিকল্পনা থাকবে হামজাকেন্দ্রিক, এতে আমাদের দলের অন্য ফুটবলাররা সুবিধা পাবেন। এ সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে অন্যদের।’
ভারতের বিপক্ষে খেলতে বৃহস্পতিবার ৬ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে কলকাতা হয়ে শিলং গেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। দলের সঙ্গী ২৪ ফুটবলার। অথচ নিয়ম হচ্ছে ২৩ ফুটবলারের স্কোয়াড। সৌদি আরবে ক্যাম্প করার পরও ২৩ সদস্যের স্কোয়াড চূড়ান্ত করতে পারেন কাবরেরা। কেন? শিলং থেকে ২৪ সদস্য থেকে বাদ দেওয়া হবে একজনকে। এ ছাড়া স্কোয়াডে রয়েছে একজন মাত্র স্ট্রাইকার। এতেই পরিষ্কার ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ নামবে রক্ষণাত্মক মেজাজে। ডাইমন্ড ফরমেশন ৪-৪-২ খেলানো হতে পারে দলকে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক মামুনুল। তিনি বলেন, ‘ভারত কেমন ফুটবল খেলবে, সেটার ওপর নির্ভর করে কোচ তার ফরমেশন ঠিক করবেন। আমরা সাধারণত ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলে থাকি।’ অবশ্য হামজার জন্য ৪-১-৪-১ ফরমেশনেও খেলাতে পারেন কোচ কাবরেরা। এ ফরমেশনেই হয়তো লিবারো বা সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন হামজা। দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হামজা হয়তো সেন্ট্রাল লায়িং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন।’
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫ মুখোমুখির চারটিতেই ড্র করেছে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে খেলা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৬ ভারত ১৮৫ র্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশের বিপক্ষে নামবে পরিসংখ্যানের বিচারে এগিয়ে থেকে। দুই দল ৪১ ম্যাচ পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। বাংলাদেশ জিতেছে ২টি ও ভারত ১৬টি এবং ড্র ১৩টিতে। আশার কথা হচ্ছে, দুই দল এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে যে ৩টি ম্যাচ খেলেছে, তাতে হারজিত হয়নি একটিও। তিন ম্যাচই ড্র হয়েছে। ১৯৮৮ সালে দুটি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ ড্র হয়েছিল গোলশূন্য এবং ১৯৯৯ সালে আরও একটি এশিয়া কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। শিলংয়ের ম্যাচে হামজা, জামালদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে। হামজার অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। দলটির কোচ মানালো মার্কুয়েজ বলেন, ‘হামজা একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। সে এখন প্রিমিয়ার লিগে নেই। কিন্তু চ্যাম্পিয়নশিপে নিয়মিত খেলে। বাংলাদেশ এখন ভালো ফুটবল খেলছে। কারণ গত তিন বা চার মৌসুম ধরে তারা একই কোচের অধীনে খেলে যাচ্ছে।’ হামজাকে ভালো একটা ফল উপহার দিতে চাচ্ছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। অনুশীলন শেষে রাকিব বলেন, হামজা ভাইয়ের থাকা দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি আমাদের ক্যাম্পে প্রথম এসেছেন। আমরা চেষ্টা করব তাকে একটা ভালো খেলা উপহার দেওয়ার। চেষ্টা করব ম্যাচটা জেতার।
দুই দল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবর। এসএ গেমসের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। ২৮ মাস পর দুই দল ফের মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ জিতেছিল ১৯৯৯ সালে। ২৬ বছর আগে এসএ গেমসের ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ১-০ গোলে এবং ১৯৯১ সালে সাফ গেমসে জিতেছিল ২-১ গোলে।