বিশ্বজুড়ে তিনশ’ কোটিরও বেশি মানুষের ওপর প্রভাব ফেলা স্নায়ুবিক রোগগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে, সঠিক চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে এসব রোগের অনেকগুলোই প্রতিরোধ বা নিরাময় সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্ব জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো স্নায়ুবিক সমস্যায় ভুগছেন। আর এসব অসুস্থতার কারণে প্রতিবছর ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
২০২১ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মৃত্যুহার ও শারীরিক অক্ষমতার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ১০টি স্নায়ুবিক রোগের মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, মাইগ্রেন, অ্যালঝেইমার ও অন্যান্য ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস এবং ইডিওপ্যাথিক এপিলেপসি।
সংস্থাটি বলেছে, কাঠামোগত, আর্থিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব রোগ মোকাবিলায় অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া, নানা রকম কুসংস্কার ও সামাজিক ভুল ধারণার কারণে অনেকেই চিকিৎসা গ্রহণে পিছিয়ে পড়েন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং স্নায়ুবিক সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রমাণভিত্তিক ও সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।
বিশ্বজুড়ে মাত্র ৬৩টি দেশে স্নায়ুবিক রোগ নিয়ে জাতীয় নীতি রয়েছে এবং মাত্র ৩৪টি দেশে এই খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থায়ন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক জেরেমি ফারার বলেছেন, ‘বিশ্বে প্রতি তিনজনের একজনের মস্তিষ্কজনিত কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। তাই তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘অনেক স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধ বা কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জন্য এ ধরনের সেবা এখনো নাগালের বাইরে।
বিশেষ করে গ্রামীণ ও অনগ্রসর এলাকায় মানুষ সামাজিক বঞ্চনা, কুসংস্কার ও আর্থিক সংকটে ভুগে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ধনী দেশের তুলনায় গড়ে ৮০ গুণ কম স্নায়ু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ফলে সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও দীর্ঘমেয়াদি যত্ন অনেকের কাছেই সহজলভ্য নয়।
সংস্থাটি বলেছে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে গবেষণায় দীর্ঘদিনের অর্থাভাব কার্যকর নীতি প্রণয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেনেভাভিত্তিক এ সংস্থা জানায়, যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে স্নায়ুবিক রোগের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাবে।
সংস্থাটি দেশগুলোকে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে জাতীয় অগ্রাধিকারে রেখে বিনিয়োগ বাড়ানো, সেবার সুযোগ সম্প্রসারণ, সচেতনতা জোরদার এবং তথ্য-নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র : এএফপি
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত